দাঁতের অতিসংবেদনশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্নভাবে। দাঁতের সাদা অংশ, যা এনামেল নামে পরিচিত, ক্ষয় হলে দাঁতের ডেন্টিন বের হয়ে যায় । ডেন্টিন বের হয়ে গেলে দাঁত ধীরে ধীরে অতিসংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তখন খাবার খাওয়ার সময় দাঁত শিরশির করতে পারে।
অতিসংবেদনশীলতার কারণ
- জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস।
- শক্ত টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা।
- পান-সুপারি, বিশেষ করে সুপারি বেশি চিবোনোর অভ্যাস।
- রাতে ঘুমের মধ্যে দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে।
- অ্যাসিডিক পানীয় ও বেভারেজ-জাতীয় পানীয় বেশি পরিমাণে পান করা।
- ভুল পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করা।
- দীর্ঘ সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করা।
যেসব সমস্যা হতে পারে
দাঁতের অতিসংবেদনশীলতার কারণে ঠান্ডা অথবা গরম পানি বা পানীয় পান করার সময় দাঁত শিরশির করতে পারে। আবার খাবার খাওয়ার সময়ও দাঁত শিরশির করতে পারে। অনেকের দাঁতে ব্যথা হতে পারে। খাবার ঠিকভাবে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে ডেন্টিন বের হয়ে গেলে ঠান্ডা অথবা গরম খাবার, ঠান্ডা বাতাস ইত্যাদি উদ্দীপক অতি সহজেই দাঁতের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। তাই দাঁত শিরশির করে।
যেমন টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে
দাঁতের শিরশির ভাব দূর করার জন্য উপযোগী টুথপেস্টগুলো সাধারণ টুথপেস্টগুলো থেকে আলাদা। কারণ এতে কিছু উপাদান থাকে, যা দাঁতের শিরশির ভাব প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্ট এবং তরল ওষুধ দাঁতের শিরশির অথবা অতিসংবেদনশীলতা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সবচেয়ে দ্রুত কাজ করে থাকে সেনসিটিভ এক্সপার্ট টুথপেস্ট। এ ধরনের টুথপেস্ট মোটামুটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দাঁতের শিরশির ভাব কমিয়ে দিতে সক্ষম। সেনসিটিভ এক্সপার্ট টুথপেস্টে রয়েছে পটাশিয়াম সাইট্রেট, হাইড্রক্সিঅ্যাপাটাইট এবং জিংক সাইট্রেট। পটাশিয়াম সাইট্রেট দাঁতের স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়, যার কারণে টুথপেস্ট শিরশির করা দাঁতে প্রয়োগ করার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শিরশির অনুভূতি থেকে রোগী মুক্তি পেয়ে আরাম অনুভব করে। তখন আর খাবার খাওয়ায় সমস্যা হয় না।
সকালে নাশতার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের মাড়ির স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
হাইড্রক্সিঅ্যাপাটাইট দাঁতের এনামেলের প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান। দাঁতের এনামেল যখন ক্ষয় হয়, তখন খনিজ উপাদানগুলোর ডিমিনারালাইজেশন হয়ে থাকে। টুথপেস্টে বিদ্যমান হাইড্রক্সিঅ্যাপাটাইট রিমিনারালাইজেশনে সাহায্য করে এবং পুনরায় দাঁতের ক্ষয় রোধ করে থাকে। জিংক সাইট্রেটের ব্যাকটেরিয়াবিরোধী কার্যকারিতা রয়েছে। ফলে দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষার জন্য কাজ করে থাকে। তবে সেনসিটিভ এক্সপার্ট টুথপেস্ট ব্যবহার করার পরেও যদি আপনার দাঁতের শিরশির ভাব দূর না হয়, সে ক্ষেত্রে দাঁতের চিকিৎসা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনার ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁতে লাইটকিউর ফিলিং ছাড়াও অন্যান্য ধরনের বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় টুথপেস্ট আঙুলে নিয়ে শিরশির করা দাঁতে লাগিয়ে দিলে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আপনার শিরশির অনুভূতি চলে যাবে।
প্রতিরোধ
সব সময় নরম একটি টুথব্রাশ দিয়ে সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। তাহলে দাঁতের ক্ষয় হবে না।
অ্যাসিডিক পানীয় অথবা কোল্ড ড্রিংকস স্ট্র দিয়ে পান করলে ভালো হয়। এতে পানীয় দাঁতের সংস্পর্শে কম আসে। যেকোনো ধরনের পানীয় পান করার পর একটু পানি পান করলে ভালো হয়। তাতে দাঁতে কোনো কিছু লেগে থাকার আশঙ্কা থাকে না।
কফি পান করার পর অবশ্যই একটু পানি কুলকুচি করে খেয়ে নিতে হবে। তাতে দাঁতে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ পড়বে না।
দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক: ডা. মো. ফারুক হোসেন, মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, ঢাকা