চলমান মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ছয় বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরাও।
তবে এক জেলায় প্রশ্নফাঁস হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন সব শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। থানার লকার থেকে প্রশ্ন বিতরণে বিশেষ ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রশ্ন বিতরণ ও কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে কেন্দ্র সচিব চাইলেও পরীক্ষার আগে কোনোভাবে ফয়েল পেপারে মোড়ানো প্রশ্নের প্যাকেট খুলতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চলমান এসএসসি পরীক্ষার ৬টি বিষয়ের প্রশ্নফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিশিক্ষা ও রসায়নের পরীক্ষা স্থগিত করে নতুন সময়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি দুই বিষয় উচ্চতর গণিত ও জীববিদ্যার পরীক্ষা নতুন প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে নির্ধারিত সময়েই নেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব মো. লুৎফর রহমানসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
দিনাজপুর বোর্ডের অধীনে এবার প্রায় পৌনে ২ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তাদের পরীক্ষার সূচিতে বিঘ্ন ঘটেছে। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে উত্তরের আট জেলার শিক্ষার্থীরা। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী।
তবে বোর্ড ভেদে আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয় বলে দেশের অন্য বোর্ডের পরীক্ষা যথাসময়ে হচ্ছে। তবে অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ওপরও প্রশ্নফাঁসের প্রভাব পড়েছে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে প্রশ্নফাঁস হওয়ায় গণিত পরীক্ষার প্রশ্নের সেট পরিবর্তন করা হয়। নতুন সেটের প্রশ্ন সমাধান করতে অনেক সময় লেগেছে। অনেকে ভালো প্রস্তুতি নিয়েও ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী।
সংশ্লিষ্ট জানান, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রশ্নপত্রের ‘সেট’ (যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে) জানানো, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ইন্টারনেটের গতি কমানো ইত্যাদি।
এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। কিন্তু দিনাজপুর বোর্ডের ঘটনায় দেখা গেলো পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই প্রশ্নফাঁস হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এ পর্যন্ত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। ঢাকার মাদারটেক আব্দুল আজিজ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পদার্থ বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষায় নির্ধারিত সেট-৪ এর পরিবততে সেট-২ প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এ অপরাধে সেই কেন্দ্রসচিবকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন আরেকজন সিনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চার নম্বর সেট সহজ ছিল, আর দুই নম্বর সেট কঠিন হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রশ্ন সেট পরিবর্তন হওয়া কেন্দ্রের সব খাতা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। এসব খাতা এনে আমাদের পরীক্ষকের মাধ্যমে প্রশ্ন মূল্যায়ন করা হবে। এরপর প্রশ্ন কঠিন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, দিনাজপুর বোর্ডে এবার প্রথমবার কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস হয়েছে, এটি আমাদের কাছে একটি নতুন ঘটনা। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য (আমরা ব্যবস্থা নেবো) এসএসসির প্রশ্নফাঁস তদন্তে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত না হতে আমাদের প্রশাসন, কেন্দ্রসচিব সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ নভেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। সেই পরীক্ষা থেকে প্রতিটি থানায় একটি করে স্পেশাল ক্যাম্প তৈরি করা হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।