বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বাড়ার সাথে সাথে সোনার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। ভালো মানের সোনার অর্থাৎ ২২ ক্যারেট দাম ভরিতে বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা। ফলে দেশের প্রতি ভরির সোনার দাম বেড়ে দাঁড়াবে ৮২ হাজার ৪৬৪ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এটা স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম। সর্বশেষ প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা।
শনিবার (২১ মে) বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার (২২ মে) থেকে সারাদেশে নতুন দাম অনুযায়ী সোনা কেনাবেচা করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম এবং ডলারের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় গত ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় গত ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। সবশেষ ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ১৮ মে থেকে যা কার্যকর হয়।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বাজুস।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি শনিবার (২১ মে) বৈঠক করে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এনামুল হক ভুইয়া লিটনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ২২ মে রোববার থেকে কার্যকর হবে।’
এর আগে যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ দেখিয়ে গত ১৮ মে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ায় বাজুস। সেসময়ও স্থানীয় বুলিয়ান মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে দেশে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করা এ সংগঠনটি।
মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানে দুদফায় ভরিতে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ছয় হাজার টাকার ওপরে বাড়ানোর কারণে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে গেছে দামি এ ধাতুটি। নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম চার হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকা। এর আগে দেশের বাজারে কখনো স্বর্ণের ভরি ৮২ হাজার টাকা হয়নি।
এদিকে, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ২৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৫৩৪ টাকা করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮৫৭ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা।
স্বর্ণের দাম বাড়লেও রুপার আগের নির্ধারিত দামই বহাল রয়েছে। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম এক হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক হাজার ২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৯৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।