বর্তমানে দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে এমন ব্যাংকের ৫০ শতাংশ ব্যাংক তাদের সাইবার নিরাপত্তায় নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়াল (এনজিএফডব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপন ও ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে। অবশিষ্ঠ ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটি স্থাপন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে আংশিক এবং অনুমোদন পর্যায়ে থাকা এই ৫০ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এই ৫০ শতাংশ ব্যাংক যে কোনো সময় সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে পারে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার ঢাকার মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘আইটি অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রহিম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, দেশের ব্যাংকে আইটি বিষয়ে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। তাই আমাদের এ বিষয়ে প্রস্তুতি রাখতে হবে, যেন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা রোধ করতে পারি। এ জন্য টেকনোলজি উন্নতি করতে হবে। শুধু ভালো সফটওয়্যার কিনলেই হবে না। এগুলো যথাযথ পরিচালনার জন্য দক্ষ কর্মীও তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে কর্মকর্তাদের আইটি প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, হ্যাকিং বিভিন্ন মাধ্যমে হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যাংক আইটি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের সতর্ক হওয়া এবং আইটি নিরাপত্তা জোরদারে মনোযোগী হতে হবে। আমি মনে করি, আইটি বিভাগ ও আইটি সিকিউরিটি বিভাগ আলাদা হওয়া উচিত। বিশেষ করে আইটি সিকিউরিটি বিভাগ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর অধীনে রাখা।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, অধিকাংশ ম্যানেজমেন্টের আইটি খাতে নজর না দিয়ে তারা শুধু ডে টু ডে ব্যবসা বোঝে, এতে ব্যাংকিং ব্যবসা অনেকটা দোকানদারে পরিণত হয়েছে। শর্টটাইম লাভ-লোকসানের চিন্তার কারণে এটি হয়েছে। এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইটি খাতে নজর ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে আইটিকে পৃথক করার কিছু নেই। তাই সব কর্মকর্তাকেই আইটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ আইটি না জানলে ওপরে ওঠা যাবে না।
প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতের আইটি বিভাগে কর্মরত জনবলের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে আইটি বিভাগে কর্মরত ছিল মাত্র ৩ হাজার ২১৩ জন। অর্থাৎ গড়ে আইটি বিভাগে ৫৭ জন কর্মরত। এর মধ্যে সর্বনিম্ন জনবল ৬ জন ও সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সর্বোচ্চ ১১৬ এবং সর্বনিম্ন ৪১ জন নন-আইটি কর্মকর্তার জন্য মাত্র ১ জন বিশেষায়িত ব্যাংকে সর্বোচ্চ ২৬৯ সর্বনিম্ন ১৫১ জন কর্মকর্তার জন্য ১ জন, বেসরকারি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৯১ এবং সর্বনিম্ন ১৪ জনের জন্য ১ জন বিদেশি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৪৫ এবং সর্বনিম্ন ১৪ জনের জন্য ১ জন আইটি কর্মকর্তা রয়েছেন। গড়ে কতটি শাখায় ১ জন আইটি কর্মকর্তাকে সেবা দিতে হয় সেই চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৮টি শাখার জন্য ১ জন, বিশেষায়িত ব্যাংকে ২৯টি শাখার জন্য ১ জন, বেসরকারি ব্যাংকে ৪.৫টি শাখার জন্য ১ জন এবং বিদেশি ব্যাংকে ২.২টি শাখার জন্য ১ জন আইটি কর্মকর্তাকে কাজ করতে হয়েছে।