শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

নতুন বাণিজ্য চুক্তি ‘সেপা’, ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সই হওয়ার সম্ভাবনা এ বছরেই

প্রকাশঃ

নতুন বাণিজ্য চুক্তি ‘সেপা’, ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সই হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা এ বছরেই। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ যখন দশ বিলিয়ন (হাজার কোটি) ডলার ছুঁই ছুঁই – তখনও কিন্তু দুতরফের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি (ট্রেড ডেফিসিটি) রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণে। রয়েছে কিছু কিছু অসঙ্গতিও। প্রধানত এই ইস্যুগুলোর মোকাবিলায় দুই দেশ নিজেদের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে – যার নাম কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা ‘সেপা’।

দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, এ বছরের আরও পরের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফরের সময়ই যাতে ‘সেপা’ নামে এই নতুন চুক্তিটি বা তার ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করা যায়, তার জন্য দুদেশই জোর কদমে চেষ্টা চালাচ্ছে।

বস্তুত গত শুক্রবার (৪ঠা মার্চ) দিল্লিতে দুদেশের বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে বৈঠকে আলোচনার একটা প্রধান বিষয় ছিল এই ‘সেপা’। দুদেশের বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ প্রস্তাবিত এই সেপা-র একটি রূপরেখা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করেছেন – তাদের পেশ করা সেই দলিলের নানা দিক নিয়ে বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণও করা হয়েছে।

বৈঠকের পর শনিবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের তৈরি করা খসড়া যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত (ফাইনাল) করার ব্যাপারে দুদেশের বাণিজ্য সচিবই একমত হয়েছেন। আর সেটা চূড়ান্ত হলেই ‘সেপা’ স্বাক্ষরের জন্য তৈরি হয়ে যাবে।

খসড়া চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষিত না-হলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে দুপক্ষই। এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কোনও একটি সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। ঢাকা- দিল্লি উভয়পক্ষই চাইছে সেই সফরের সময়ই নতুন এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিটি সই হোক।

কিন্তু সাফটা-র (দক্ষিণ এশিয়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) আওতায় ইতিমধ্যেই যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য চলছে, সেখানে নতুন আর একটি বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজন কেন?

দিল্লিতে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিঙ্কট্যাঙ্ক আর আই এস-র অধ্যাপক ড. প্রবীর দে বলছিলেন, সেপা-র নামকরণেই যেহেতু ‘কম্প্রিহেনসিভ’ বা সর্বাত্মক শব্দটা আছে, তাই বোঝাই যাচ্ছে এর পরিধি হবে অনেক বিস্তৃত।

‘সাফটায় যেমন আমরা শুধু গুডস বা পণ্য-র কথা বলি, কিন্তু এই ধরনের একটা চুক্তিতে সার্ভিসেস (পরিষেবা), গুডস (পণ্য) ও ইনভেস্টমেন্ট (লগ্নি) – এই তিনরকম জিনিসই এর আওতায় আসবে। ফলে সহযোগিতার পরিসরও হবে অনেক বেশি।’

‘তা ছাড়া সাফটা-র আওতায় বাংলাদেশ অবাধ বাণিজ্যর সুবিধা পাচ্ছে যতদিন তারা স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে ততদিনই – অর্থনৈতিকভাবে তারা পরের ধাপে উত্তীর্ণ হলে দুদেশের মধ্যে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তির দরকার হবেই’- বলেন ড. প্রবীর।

তবে এই মুহূর্তে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হওয়ার কারণে সাফটা-র অধীনে বাংলাদেশের যে পণ্যগুলো ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (ডিউটি-ফ্রি অ্যাকসেস) পেয়ে থাকে, এলডিসি জোট থেকে বাংলাদেশের ‘প্রোমোশনে’র আরও অন্তত তিন বছর সেই সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধও ভারত বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে।

দিল্লিতে শুক্রবার বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও ভারতে তার কাউন্টারপার্ট বিভিআর সুব্রমনিয়ামের মধ্যে বৈঠকের সময় ভারত আরও কথা দিয়েছে, সেপা চুক্তি সই না-হওয়া অবধি এই বিশেষ সুবিধা অবশ্যই জারি থাকবে।

ওই একই বৈঠকে আরও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল :

১. দুদেশের মধ্যেকার প্রধান বাণিজ্যিক পয়েন্ট বেনাপোল-পেট্রাপোলে যে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) রয়েছে সেখানে এখন থেকে রাউন্ড দ্য ক্লক অপারেশন হবে, অর্থাৎ দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ চলবে।

২. দুই দেশের মধ্যে যাতে মালবাহী ট্রেন সহজে যাতায়াত করতে পারে তাই বেনাপোলেই একটি ৯০০ মিটার লম্বা নতুন সাইডিং রেল লাইন নির্মিত হবে। একই উদ্দেশে দর্শনা রেলস্টেশনেও তৈরি হবে লোডিং ও আনলোডিং প্ল্যাটফর্ম।

৩. বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ বাজারে তৈরি করা হবে একটি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ফেসিলিটি, তার জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্টের (ডিপিপি) অনুমোদনও সারা। ঈশ্বরদী-তে রেল-রোড নির্ভর আইসিডি তৈরির জন্যও একই ধরনের রিপোর্টে সায় মিলেছে।

৪. কোভিড মহামারির কারণে দুদেশের সীমান্তে যে ‘বর্ডার হাট’-গুলো গত প্রায় বছরদুয়েক ধরে বন্ধ রয়েছে সেগুলো শিগগিরই আবার চালু হবে। বাড়ানো হবে বর্ডার হাটের সংখ্যাও।

এরপর ‘সেপা’ স্বাক্ষরিত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নতুন গতি ও উৎসাহ পাবে বলে দুপক্ষই দারুণ আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ