প্রতি টন রডের দাম ৮০ হাজার ৭০০ টাকায় পৌঁছেছে বাংলাদেশে। বিশ্বে কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়াকে গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে রডের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রডের দাম গত বৃহস্পতিবার প্রতি টনে আগের দাম ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন জানান, গতকাল বাজারে রডের প্রকৃত মূল্য ছিল ৮৩ হাজার টাকা। টিসিবির তথ্য থেকে জানা গেছে, ৬০ গ্রেডের রডের দাম গত মাসে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে এবং গত এক বছরে বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক বাজারে মেল্টিং স্ক্র্যাপের খরচ বেড়ে যাওয়াকে স্থানীয় বাজারের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত জানান, স্টিল স্ক্র্যাপের দাম সম্প্রতি বেড়ে প্রতি টনে ৬৩০ ডলার হয়েছে।
গত অক্টোবরে ইস্পাত পণ্যের কাঁচামাল মেল্টিং স্ক্র্যাপ প্রতি টন ৩০০ থেকে ৩৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছিল। তবে এর পর থেকে এর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে ভারতসহ বেশ কিছু দেশ কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমাতে বাধ্য হয়েছে। তপন আরও জানান, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে ইস্পাতের দামও প্রভাবিত হয়েছে।
৪ নভেম্বর, সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। তবে তপন দাবি করেন, বর্তমানে কাঁচামালের খরচের তুলনায় ইস্পাতের খুচরা মূল্য এখনও উৎপাদন খরচের চেয়ে কম আছে। তিনি আশংকা প্রকাশ করেন, আগামীতে দাম আরও বাড়বে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আখতার হোসেনও তপন সেনগুপ্তের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, তেলের দাম বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে রডের মূল্য প্রতি টনে ১ লাখ টাকায় পৌঁছে যেতে পারে। আখতার বলেন, ‘ইস্পাত ও অন্যান্য কাঁচামালের মূল্য বাড়তে থাকায় নির্মাণকাজের খরচ গত এক বছরে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে।’
রাজধানীর বংশাল এলাকার খুচরা বিক্রেতা আবদুল মান্নান জানান, তাদেরকে পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক কাঁচামাল সংকট ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বেড়েছে। মান্নান বলেন, ‘গত ৬ মাস ধরে ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে। কিন্তু গত ১৫ দিনে প্রতি টনে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা বেড়েছে।
আমদানি বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ১১ নভেম্বরে ৮৫ দশমিক ৭৯ টাকা হয়েছে, যেটি ১ বছর আগে ৮৪ টাকা ছিল। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্সট্রাকশান ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শফিকুল হক তালুকদার বলেন, ‘কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় আমাদের প্রকল্পগুলো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।’
তিনি দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং স্কাইরোজ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল মাহমুদ বলেন, নির্মাণের খরচ ইতোমধ্যে বেড়েছে, কিন্তু ভোক্তাদের সঙ্গে আগে থেকে চুক্তিবদ্ধ থাকার কারণে তারা বর্ধিত মূল্যের সমন্বয় করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ইস্পাত উৎপাদকরা অযৌক্তিকভাবে এমএস রডের দাম বাড়িয়েছে।