শনিবার, ২৩শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

প্রস্তাবিত ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা নিয়ে রিহ্যাবের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশঃ

প্রস্তাবিত ড্যাপ (২০১৬-৩৫) এবং সংশ্লিষ্ট খসড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়িত হলে ভবনের আয়তন বর্তমানে যা অনুমোদন হচ্ছে তা থেকে কমপক্ষে ৩৩-৫৩ % আয়তন হ্রাস পাবে। ফলে বেড়ে যাবে ফ্ল্যাটের দাম, অধরা থেকে যাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের স্বপ্ন। ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সাধারণ ক্রেতা ও জমির মালিকসহ আবাসন ব্যবসায়ীরা। যা নাগরিকদের মাঝে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

৩১ অক্টোবর (রবিবার) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মতামত তুলে ধরেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা। অনুষ্ঠানে রিহ্যাব এর ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ নজরুল ইসলাম (দুলাল), ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ লায়ন শরীফ আলী খানসহ বিভিন্ন পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব এর কথা উল্লেখ করে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্মিতব্য ভবনের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি, দাপ্তরিক ও অন্যান্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যয় সমূহ একই থাকার কারণে ফ্ল্যাট সমূহের মূল্য নুন্যতম ৫০% বৃদ্ধি পাবে যার ফলশ্রুতিতে ক্রেতাগণের ক্রয় ক্ষমতা যৌক্তিকভাবে কমে যাবে এবং “আবাসন” সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যহত হবে। এছাড়াও ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের ফলে সিরামিক, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ সহ অন্যান্য ২৬৯ টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ সমূহ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে, সর্বোপরি আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি অশনি সংকেত রূপে দেখা দিবে।

উদাহরণ দিয়ে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, পূর্বে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ মোতাবেক ২০ফিট রাস্তা সংলগ্ন ৫ কাঠা জমিতে সর্বনি¤œ গ্রাউন্ডফ্লোর সহ ৮ তলা ফ্লোর বিশিষ্ট ভবনে মোট ১৩,৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত, প্রস্তাবিত বিধিমালা মোতাবেক ৫ তলা ফ্লোর বিশিষ্ট মোট ৯,০০০ বর্গফুট ভবন নির্মাণ এর অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুট এর চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে নির্মিতব্য ভবনের উচ্চতা ৩/৪ তলার বেশী হবে না এবং আয়তন উদ্বেগজনক ভাবে হ্রাস পায়। এরূপ চিত্র প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

প্রস্তাবিত বিধির নির্দেশনার কারণে জমির মালিকগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিবে উল্লেক করে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, নির্মাণ যোগ্য ফ্ল্যাট সংখ্যা সমূহ কমে আসার কারণে বাসা ভাড়া সীমাহীন ভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বিভিন্ন স্থানে সাবলেট সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে যা নগরীতে একটি অ-স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তিনি। অন্যান্য নগরীতে ৫০-৫৩% ভবনের আয়তন হ্রাস করার কারণে আবাসনের চাহিদা মেটাতে ফসলী জমিতে ভবন তথা বাসাবাড়ীর নির্মাণের একটি প্রবনতা সৃষ্টি হবে, যার কারণে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার সংকট দেখা দিবে, যা হবে জাতির জন্য একটি বিরাট বিপর্যয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত ৭ই মার্চ ২০২১ তারিখে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ড্যাপ সম্পর্কীত একটি সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ড্যাপ রিভিউ কমিটির আহবায়ক মাননীয় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম রিহ্যাব ও বিএলডিএ এর মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিলেন। অদ্যাবধি এই ওয়ার্কিং কমিটির কোন সভা ডাকা হয়নি এমনকি স্টেক হোল্ডারদের কোন সুপারিশও গ্রহণ করা হয়নি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্টেক হোল্ডারদের পাশ কাটিয়ে, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান এর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম কতটুকু সাফল্য আনবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকা শহরে জনঘনত্ব কমিয়ে ঢাকাকে বসবাস যোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে আমরাও উৎসাহি কিন্তু জীবিকার জন্য, উর্পাজনের জন্য, চিকিৎসার জন্য, উন্নত শিক্ষার জন্য, বিচার সালিশের জন্য এ দেশের জনগণের কেন্দ্রীয় ঢাকাই এখনও পর্যন্ত একমাত্র কেন্দ্রস্থল। এই সু-ব্যবস্থা গুলো যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যত্র তৈরি করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা শহরের জন্যসংখ্যা কমানো বা ঢাকা শহরে অভিবাসনে বাধা প্রদান অলিক স্বপ্ন মাত্র মনে করেন তিনি। আয়তন বা উচ্চতা কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানো হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করার চেষ্টা কতটুকু বাস্তব সম্পন্ন তা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় বটে, তার চেয়ে ঢাকা শহর এর সংলগ্ন অনান্য শহর সমূহের সাথে হাইস্প্রীড কমিউনিকেশন সিষ্টেম ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যান্য নগরী সমূহতে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা সমূহ উন্নয়ন তথা নির্মাণের ব্যবস্থা করা অধিকতর ফলপ্রসু হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মত পোষণ করেন, আমরা তাদের সাথে সহমত পোষণ করি। এই বিষয়ে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই কারণ তিনি ইতিমধ্যে এই ব্যাপক কর্মযজ্ঞটি শুরু করেছেন। যতদিন পর্যন্ত এই বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা সু-সম্পন্ন না হয় ততদিন পর্যন্ত ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানো এই প্রচেষ্টা অকার্যকরই হবে বলে প্রতীয়মান এবং এই প্রচেষ্টার ফলে জনঅসন্তোষ ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হবে এবং আবাসন সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল দেশে যেখানে জমির সংখ্যা অপ্রতুল সেরকম ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে নিরাপদ আবাসন এর সু-ব্যবস্থা ও সংখ্যা যত পরিমাণ বাড়ানো যায় ততই আবাসন সমস্যা সমাধানে অধিকতর কার্যকর হবে বলে প্রতীয়মান হবে বলে মত প্রকাশ করেন রিহ্যাব এর সভাপতি। উন্নয়নের রোল মডেল এই সরকার এরূপ গণ অসন্তোষ সৃষ্টিকারী, অবাস্তব বিধি-বিধান প্রনয়ণে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে না বলেও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ