বাংলাদেশির উপস্থিত বুদ্ধিতে বাঁচল এক ব্রিটিশ নাগরিকের প্রাণ। যুক্তরাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ওয়েলসের ব্যাঙ্গোর ইউনিভার্সিটির ছাত্র শেখ রিফাত (২৪) পড়াশোনার পাশাপাশি ম্যানেজার পদে কর্মরত আছেন বাঙ্গোরের বাংলাদেশ তন্দুরি রেস্টুরেন্টে।
২৩ মে রোববার প্রতিদিনের মতো কাজে যোগ দেন রিফাত। তখনো তিনি জানতেন না এই দিনটি তার জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিফাত বলছিলেন, “সবেমাত্র খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। আমি গ্রাহকদের জিজ্ঞেস করছিলাম, সব ঠিক আছে কি না? তারা খাবার উপভোগ করছেন কি না?”
খাবার পরিবেশনের সময় রিফাত খেয়াল করলেন, পাশের টেবিলে এক যুবক কোনো কারণে অসুস্থ বোধ করছেন। আদতে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ওয়েলসের স্থানীয় বাসিন্দা জ্যাক স্মলিংয়ের। যদিও ঘটনার আকস্মিকতায় সঙ্গে থাকা বন্ধুরাও বুঝতে পারছিলেন না তার অবস্থা কতটা ভয়াবহ।
শ্বাসকষ্টে জ্যাকের চেহারা লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। তাৎক্ষণিকভাবে যুবককে চেয়ার থেকে টেনে তোলেন রিফাত। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেন। সেইসঙ্গে বুকে চাপ দিয়ে জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিতে থাকেন। রেস্টুরেন্টের বাকি লোকজন অবাক হয়ে দেখছিল এই দৃশ্য।
কিছুক্ষণের মধ্যে রিফাতের চেষ্টায় যুবকের গলায় আটকে যাওয়া খাবার নেমে যায়। পুনরায় শ্বাস নিতে শুরু করে সে। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রিফাত বলেন, “কী ঘটছে তা বুঝতে আমার দুই থেকে তিন সেকেন্ড সময় লেগেছে। আমি তাকে চেয়ার থেকে টেনে করিডোরে নিয়ে আসি ও বুকের উপরে হাত চেপে ঝাঁকাতে থাকি। কয়েকবারের চেষ্টায় তার আটকে যাওয়া খাবারটি বেরিয়ে আসে।”
সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই পুরো দৃশ্য। ঘটনার পর রিফাতকে ধন্যবাদ জানিয়ে জ্যাক জানান, তিনি এখন ঠিক আছেন। এদিকে রিফাতের এই বীরত্বে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সবাই।
গলায় আটকে যাওয়া খাবার বের করার ‘হাইমলিচ ম্যানুভার’ কৌশল কীভাবে জানলেন এমন প্রশ্নে রিফাত বলেন, “ছোটবেলায় আমার গলাতেও একবার খাবার আটকে যায়। আমার বাবাও একইভাবে আমাকে উদ্ধার করেন।”
অন্যদিকে বিবিসি রেডিও-র সাক্ষাৎকারে জ্যাক স্মলিং বলেন, “আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে রিফাত সেখানে উপস্থিত ছিলেন।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে রিফাতের এই বীরোচিত কাণ্ড। সিসিটিভির সেই ফুটেজ শেয়ার করে অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি রিফাতকে।