বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ আরও বেড়েছে। ফলে হজে যেতে এখন ৫৯ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বর্তমানে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। আগে খরচ নির্ধারিত ছিল প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা।
এছাড়া বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর ‘সাধারণ প্যাকেজ’র মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। আগে এ খরচ ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি সরকার অতিরিক্ত কোনো চার্জ আরোপ করলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে, যা পরিশোধ করতে হবে হজযাত্রীকে।
তিনি বলেন, মহামারির কারণে সৌদি সরকারের হজের ঘোষণার বিলম্বের জন্য এবং সৌদি আরব থেকে প্রকৃত খরচের বিবরণী না পাওয়ায় সম্ভাব্য ব্যয় বিবেচনা করে প্রভিশনাল হজ প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত ২৫ মে সৌদি কর্তৃপক্ষ মিনায় অবস্থান স্থলের ভিত্তিতে ৪ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ৪ ধাপের ব্যয়ের বিবরণ নির্ধারণ করেছে।
এর মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যয়ের ধাপ ‘ডি’ ও ‘সি’ প্রকাশ করেছে। ওই তথ্য অনুযায়ী মোয়াল্লেম ফি ‘সি’ অনুসারে ৮ হাজার ৬৪০ সৌদি রিয়াল এবং ‘ডি’ অনুসারে ৭ হাজার ৪৯০ সৌদি রিয়াল ধার্য করা হয়। ওই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াল্লেম ফি ‘সি’ অনুসারে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৭ টাকা এবং মোয়াল্লেম ফি ‘ডি’ অনুসারে ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পায়।
প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান আরও বলেন, উন্নতমানের বাস সার্ভিস, ট্রেন ভাড়া এবং বাড়ি ভাড়া থেকে উভয় প্যাকেজে কিছু অর্থ সাশ্রয় করা গেছে। এ সাশ্রয় এবং বাংলাদেশের হজযাত্রীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও তাদের প্রতি সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে উভয় প্যাকেজে সৌদি আরবে আবশ্যকীয় ব্যয় ৫৯ হাজার টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এই ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করে সভা।
এদিকে বাড়তি টাকা গ্রহণের জন্য সরকার ২৮, ২৯ ও ৩০ মে সময় নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী শনিবার (২৮ মে) দেশব্যাপী তফসিলি ব্যাংকগুলো খোলা রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ফরিদুল হক খান বলেন, পে-অর্ডারের মাধ্যমে এই টাকা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুকূলে মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় শাখার ০০০২৬৩৩০০০৯০৮ একাউন্ট নম্বরে ঢাকার হজ অফিসের পরিচালক বরাবর ৩০ মে’র মধ্যে জমা দেবেন হজযাত্রীরা। এ জন্য আশকোনার হজ অফিসে বিশেষ বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরাও সমপরিমাণ অর্থ নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা দেবেন বলে জানান ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।
এসময় উপস্থিত হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সৌদি আরবে খরচ এক লাখ ৫ হাজার, আবার আরেক ক্ষেত্রে ৭৪ হাজার টাকা বেড়েছে। কিন্তু আজকে হজ ব্যবস্থাপনার নির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে ৫৯ হাজার টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকলে তা হাজীদের ফেরত দেওয়া হবে- এই শর্তে গত ১১ মে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার।
এবার বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজে যেতে পারবেন।
আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ অংশে সৌদি আরবের কিছু প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। সৌদি আরব যাওয়ার ফ্লাইট শেষ হবে ৩ জুলাই। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট ১৪ জুলাই শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ আগস্ট।