বুধবার, ৬ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

বিজয় দিবস উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী “বিজয়” অনুষ্ঠিত

প্রকাশঃ

ফুনুন আর্টস গ্রুপ এবং মাহফুজ ক্যানভাস ১২ ডিসেম্বর দুবাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল আর্ট সেন্টারে বাংলাদেশের ৫১তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে পাওয়ারপ্যাক” নিবেদিত “বিজয়” নাম শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে তাদের শৈল্পিক যাত্রায় একটি মাইলফলক তৈরি করেছে যা চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উদযাপনের অংশ হিসেবে স্বশিক্ষিত শিল্পীদের শিল্পকর্ম বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রদর্শনীটি সত্যিই বিজয়ই ছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “বিজয়” বাংলাদেশী স্ব-শিক্ষিত শিল্পীদের দ্বারা আয়োজিত সবচেয়ে বড় এবং প্রথম আর্ট ইভেন্ট। ফুনুন আর্টস ও মাহফুজ ক্যানভাসের কোলাবোরেশনে স্ব-শিক্ষিত শিল্পীদের শিল্পকর্মগুলো বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়া হয়। এই প্রদর্শনীটিতে সহনশীলতা ও ঐক্যের বার্তা ঘোষণা করা হয় যার মাধ্যমে জাতিগুলো তাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে। অনুষ্ঠানটি ছিল ঐক্যের উদযাপন এবং সেই সমস্ত বাধার উপর বিজয়ের ঘোষণা যা মানবতাকে বিভক্ত করে। ফুনুন আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শিবা খান জানান, ‘শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতই এমন একটি ইভেন্টের আয়োজন করতে পারে কেননা এখানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ সম্প্রীতি ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে। শিল্পের নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই এবং আমরা এই শিল্পের মাধ্যমে সকলকে মানুষকে একত্রিত করার চেষ্টা করছি’ ।

‘বিজয়’ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের মোট ষাটটি বাংলাদেশী শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। বেশিরভাগ শিল্পী প্রদর্শনীর অংশ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রদর্শনীর জন্য তাদের শিল্পকর্ম পাঠিয়েছিলেন । আরও বিশটি ভিন্ন জাতীয়তার শিল্পীদের সাথে সংযুক্তআরব আমিরাতের নাগরিকরাও প্রদর্শনীতে যোগদান করেন এবং ভালবাসা, শান্তি, সম্প্রীতি এবং ঐক্যবদ্ধতার থিমে প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলো উপভোগ করেন। পাওয়ারপ্যাক” নিবেদিত “বিজয়” নাম শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ভালবাসার কথা বলে এবং দেশ, মানবতা এবং মানুষের প্রতি ভালবাসার কথা বলার জন্য আমাদের শিল্পীরা যে ভাষাটি জানেন তাহলে চিত্রকর্ম। শিবা খান আরো বলেন, ‘এই শিল্প প্রদর্শনীটি বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ’।

দুবাই এবং উত্তর আমিরাতের বাংলাদেশী কনস্যুলেট-জেনারেল বি.এম. জামাল হোসেন এই মেগা আর্ট ইভেন্টের উদ্বোধন করেন। ইভেন্টটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিতি হয়েছিলেন। বি.এম জামাল হোসেন ফুনুন আর্টস এবং মাহফুজ ক্যানভাসের এই অনন্য উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘এটি একটি নতুন যুগের সূচনা করবে যেখানে শিল্প, মতাদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সারা বিশ্ব একত্রিত হবে।’ তিনি এমন চমৎকার রেকর্ড-ব্রেকিং ইভেন্টের আয়োজন করার জন্য টাইটেল স্পন্সর পাওয়ারপ্যাক এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ও আরো জানান তিনি নিজেও একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী এবং এক্সপ্রেশনিজম শিল্পকে পছন্দ করেন। তার সবচেয়ে পছন্দের পেইন্টিং মাধ্যম কাগজ ও কলম । তিনি এই চিত্রপ্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৫১তম বিজয় দিবস উদযাপনে বাংলাদেশের শিল্পীদের সাথে যোগদানকারী অন্যান্য জাতীয়তার শিল্পীদেরও ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও সকল অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং দেশকে গর্বিত করে এমন আরও অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ইভেন্টের টাইটেল স্পন্সর হলো পাওয়ারপ্যাক (সিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান )। পাওয়ারপ্যাকের চেয়ারম্যান জনাব রিক হক সিকদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব রন হক সিকদার বলেন, ‘বাংলাদেশের বিজয়ের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্ট ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিল্পীরা ক্যানভাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি আরো জানান শিল্পীদের সৃষ্টিকে একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম প্রদান এবং তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে বিশ্বব্যাপি তুলে ধরার জন্য উৎসাহিত করতে প্রদর্শনীটির পাশে দাঁড়িয়েছেন।’ পাওয়ারপ্যাক বাংলাদেশে ভিত্তিক বৃহত্তম ব্যবসায়িক সংগঠনগুলির মধ্যে একটি এবং বিশ্বজুড়ে ৭০টিরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা -জনাব জয়নুল হক সিকদার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। পাওয়ারপ্যাকের একটি আইকনিক প্রকল্প “বঙ্গবন্ধু ট্রাই-টাওয়ার” যা ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউনশিপ প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টরে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় অবস্থিত। যা ইভেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সকল সুবিধাসম্পন্ন ৪৭৩ মিটার লম্বা টাওয়ারসহ মোট ৪৫ মিলিয়ন বর্গফুট বিল্ডআপ আবাসিক এলাকার এই প্রকল্প গড়ে উঠছে।

স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল বর্ণাঢ্য ও প্রাণবন্ত। ফারাহ খান বলেন,’আমাদের প্রতিটি ইভেন্টের আলাদা নিজস্বতা থাকে। আমরা ইভেন্টিকে আমাদের শিল্পীদের পাশাপাশি অতিথিদের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা করতে কাজ করে থাকি। আমরা প্রতিটি রাষ্ট্র এবং তাদের সংস্কৃতির স্বতন্ত্রতাকে মূল্যায়ন করি। আরও জানান “বিজয়” ছিল এরকমই সংস্কৃতির মিশ্রণ এবং যা আমাদের সকলের জন্য অবিস্মরনীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

কিংবদন্তি শিল্পী আহমদ আল আওয়াধি প্রদর্শনীটির থিমকে সময়োপযোগী বলে এর প্রশংসা করেন । মি. রুকনি জানান, ‘ বিশ্বকে আবার ভালবাসার ভাষা শিখতে হবে কারণ মানুষ বস্তুগত সম্পদের দৌড়ে ছুটতে গিয়ে মানবতার ভুলে গেছে। বাংলাদেশের ৫১ তম বিজয় দিবস উপলক্ষকে কেন্দ্র করে “বিজয়” এর মতো উদ্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিল্প আমাদের সেই ভুলে যাওয়া মূল্যবোধগুলিকে ফিরিয়ে আনতে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। আমি ফুনুন আর্টস এবং মাহফুজ ক্যানভাসের এই মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই’। “বিজয়” নাম শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তী আমিরাতি ফ্যাশন ডিজাইনার সুলতানা কাযিম, মুয়ায়েদ কাসিফা, পিটার গ্রিসম্যান সহ আর অনেক সম্মানিত বেক্তিবর্গ।

ফুনুন আর্টস এক দশক ধরে আর্ট ইভেন্টের আয়োজন করে আসছে এবং তাদের মুলমন্ত্র হলো , “একতাই সাফল্য, একত্রে কাজ করাই অগ্রগতি”। ছয়জন শিল্পী নিয়ে যাত্রা শুরু করা ফুনুন আর্টস বর্তমানে এখন বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের ৬০০ শিল্পীকে ছাড়িয়ে একটি বিশাল দল। দলটি ধারাবাহিকভাবে আর্ট ইভেন্ট পরিচালনা, বিভিন্ন সংস্থার সাথে কোলাবোরেশান করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প জগতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।শিবা খান এবং ফারাহ খানকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার গোল্ডেন ভিসা দিয়ে সম্মানিত করেছেন এছাড়াও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ খান বোনদের এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তারা প্রদর্শনী, শিল্প আলোচনা, প্যানেল আলোচনা, আর্ট প্রতিযোগিতা এবং আরও ইভেন্টের আয়োজন করে থাকেন।

মাহফুজ ক্যানভাসের প্রথম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক আর্ট প্রদর্শনী ছিল “বিজয়” শো। মাহফুজ ক্যানভাসের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ‘তারা এই প্রচেষ্টাটিকে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক অর্জন হিসাবে দেখেন এবং এটি এখন পর্যন্ত স্ব-শিক্ষিত শিল্পীদের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রদর্শনী। মাহফুজ ক্যানভাস তার দেশের স্ব-শিক্ষিত শিল্পীদের সাহায্য করার জন্য সর্বদাই এগিয়ে থাকেন। এছাড়াও তিনি এই ইভেন্টে সহায়তার জন্য কনস্যুলেট জেনারেল বি.এম জামাল হোসেন এবং টাইটেল স্পন্সর পাওয়ারপ্যাককে তার অশেষ ধন্যবাদ জানান। সবশেষে বলা যায় ” শিল্প আমাদের ঐক্য এবং সহনশীলতার ধারণাকে অনুপ্রাণিত করে এবং নিজেদেরকে বৃহত্তর মহাবিশ্বের অংশহিসেবে ভাবায়।’

সহনশীলতা হলো সমাজকে গঠন ও একত্রীভূত করার পাশাপাশি শান্তি ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। তেমনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমাজ সহনশীল এবং মানবিক মূল্যবোধের অভ্যাস লালন করে আসছে। দেশটির সরকার এবং জনগণ শেখ জায়েদের চিন্তাভাবনা ও দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সহনশীলতার মরূদ্যানে পরিণত করেছে, যেখানে সকলে সম্প্রীতিতে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারে।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ