প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্বনন্দিত এয়ারলাইন্স সেবা প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন টিকেটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে চেক-ইনসহ অত্যাধুনিক সেবা গ্রহণের পথ উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম বাড়বে।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবনের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
এময় তিনি আরও বলেছেন, আমাদের প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসী আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে আসেন৷ তারা এসে যেন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন। তাদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সব সেবা ডিজিটালাইজ করে ফেললে বিষয়টি আরও সহজ হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহ্বানে বিমানের প্রতীক ‘বলাকা’র ডিজাইন করেন শিল্পী কামরুল হাসান। এরপর ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ লন্ডন থেকে ১৭৯ যাত্রীকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা ছিল বিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের সময় ব্যাংকক, কলকাতা, কাঠমাণ্ডু ও দুবাই আন্তর্জাতিক রুট চালু হয়। তিনি বিমানের জন্য আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল এভিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা এখন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করেছে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে দুটি বিমান বহরে যুক্ত করি। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ফ্লাইটের তিনটি এয়ারক্রাফট সংগ্রহ করি।
‘২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে পরিণত করে দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। তারা নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৯ সালে আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে দেখি বিমানের সার্বিক অবস্থা খুবই নাজুক। জরাজীর্ণ বিমান বহর, বিপর্যস্ত শিডিউলসহ নানান অন্তহীন অভিযোগ।’
তিনি আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ৪টি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ৪টি ৭৮৭-৮ ও ২টি ৭৮৭-৯ সহ মোট ৬টি ড্রীমলাইনার, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। এই ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৮টি উড়োজাহাজই বিমানের নিজস্ব মালিকানাধীন। অনেকগুলো আমাদের সময়েই সংগ্রহ বা ক্রয়কৃত।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এতে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
নতুন ক্রয়কৃত উড়োজাহাজগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতেও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক রুটে বিমানের আরও ফ্লাইট চালু করতে চাই। ঢাকা-নিউইর্য়ক ফ্লাইট চালু করতে চাই। ঢাকা-মালদ্বীপ বেসরকারিভাবে ফ্লাইট চালু হয়েছে। বিমানও যেন ফ্লাইট চালু করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশের ভাবমূর্তির কথা ভেবে বিমানের যাত্রী সেবার মান বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। কারণ তারা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং তাদের কল্যাণে রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার। করোনার সময়ে বিমান ভালো সেবা দিয়েছে। তবে প্রবাসীদের প্রতি আরও যত্নবান হতে হবে।
আরও পড়ুন : আমিরাতগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্টের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার
‘দেশ উন্নত হচ্ছে, মানুষ সাবলম্বী হচ্ছে। আমাদের যাত্রীসেবা যত উন্নত করতে পারব, ততই দেশের লাভ হবে। দেশের মানুষের লাভ হবে এবং দেশটাও আরও উন্নত হবে।’