ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ২০২৫-এর প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হয়েছে ফিনল্যান্ড। এ নিয়ে টানা অষ্টমবারের মতো সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে দেশটি।
তবে বাংলাদেশ এই তালিকায় আগের চেয়ে আরও পিছিয়ে গেছে। সুখী দেশের তালিকায় ১৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হয়েছে ১৩৪তম।
এর আগে গতবছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে সুখী দেশের তালিকায় ১৪৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১২৯ তম। এবার বাংলাদেশের সেই অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে মাত্র ১৩ টি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে কম সুখী। এর মধ্যে আছে মিশর, তাঞ্জানিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, লেবানন-সহ অন্যান্য আরও দেশ।
আফগানিস্তান রয়েছে তালিকার একেবারে শেষে। অর্থাৎ, বিশ্বের সবচেয়ে অসুখী দেশ হয়েছে আফগানিস্তান। রক্ষণশীল তালেবান শাসনে মেয়েদের কঠোর নিয়মকানুনের শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার কারণেই সুখ-সূচকে দেশটি সবার পিছনে বলে মনে করছেন অনেকে।
ওদিকে, ভারত এবছর তালিকায় স্থান পেয়েছে ১১৮ নম্বরে। গতবছরের তুলনায় দেশটি এবার কয়েক ধাপ এগিয়েছে। ২০২৪ সালে সুখী দেশের তালিকায় ১২৪ তম ছিল ভারত। তবে পাকিস্তান এবার ১০৯ তম স্থান নিয়ে ভারতের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আছে ২৪ নম্বর স্থানে। আর এর ঠিক আগেই ২৩ নম্বরে আছে যুক্তরাজ্য।
প্রতি বছরই ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসাবে পালন করা হয়। আর এ দিনই ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স’ বা ‘বিশ্বের সুখ-সূচক’ প্রকাশ করা হয় ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে গ্যালাপ বিশ্ব জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে।
গ্যালাপ, দ্য অক্সফোর্ড ওয়েলবিং রিসার্চ সেন্টার, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) এবং একটি সম্পাদকীয় পরিষদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয় ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস প্রতিবেদন।
এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে মূলত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সে দেশের মানুষ বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ায় কি না, তাও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হয়। এসব সূচকের ভিত্তিতেই এবারের প্রতিবেদনে শীর্ষ ১০ টি সুখী দেশ হচ্ছে:
১. ফিনল্যান্ড
২. ডেনমার্ক
৩. আইসল্যান্ড
৪. সুইডেন
৫. নেদারল্যান্ডস
৬. কোস্টারিকা
৭. নরওয়ে
৮. ইসরায়েল
৯. লুক্সেমবার্গ
১০. মেক্সিকো
বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে সামাজিক আস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বিভাজন এবং “প্রথাগত ব্যবস্থার” বিরুদ্ধে ভোটের প্রবণতা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’ এই চিত্র তুলে ধরেছে।
২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো শীর্ষ ২০ দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর, এবছরও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থার অবনতি হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে দেশটি সুখী দেশের তালিকায় ২৪তম স্থানে রয়েছে।
গ্যালাপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলানা রন-লেভি বলেন, “২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কমার অন্যতম কারণ ছিল ৩০ বছরের কম বয়সী আমেরিকানদের মধ্যে জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব।”
নর্ডিক দেশগুলো কেন এগিয়ে?
ফিনল্যান্ড টানা ৮ বছর ধরে বিশ্বে সবচেয়ে সুখী দেশ। বাকি নর্ডিক দেশগুলোও তালিকার শীর্ষেই অবস্থান করছে।
গবেষকরা বলছেন, নর্ডিক দেশগুলোর উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নাগরিকদের জীবনমান উন্নত রাখছে। পাশাপাশি, এসব দেশে সুখের বৈষম্য তুলনামূলক কম।
২০২৫ সালের প্রতিবেদনে শীর্ষ ৫ দেশের তালিকা আগের বছরের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে:
১. ফিনল্যান্ড
২. ডেনমার্ক
৩. আইসল্যান্ড
৪. সুইডেন
৫. নেদারল্যান্ডস
নরওয়ে এবারও তালিকার ৭ নম্বরে রয়েছে। অন্যদিকে, লাতিন আমেরিকার দুই দেশ প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০ এ রয়েছে। দেশ দুটো হল: কোস্টারিকা (৬তম) ও মেক্সিকো (১০ম)।
রন-লেভি বলেন, “এই দেশগুলোর মানুষদের মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক সংযোগ রয়েছে, অর্থনৈতিক দিক নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বেশি।”
গবেষকরা বলছেন, কেবলমাত্র সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সুখ নিশ্চিত করে না। বরং সামাজিক বন্ধন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সুখের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।