অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বিদায়ী বছর ২০১৮ শেষে। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এবার কমিশন, সার্ভিস চার্জ এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার আয় থেকে বড় অংশ আসার কারণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বেড়েছে। তখ্য মতে এ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী ৩৫টি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে এবং ২৯টি অনেক ব্যাংক আগের বছরের চেয়েও বেশি মুনাফা করেছে। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা পাওয়া যাবে সেটাই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন ও কর বাদ দেয়ার পর যে মুনাফা থাকে উহাই একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। সেই সময় ব্যাংকটি ২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা আয় করে, যা ২০১৭ সালে ছিল ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। একইভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ৯১৫ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক বিদায়ী বছরে মুনাফা করেছে ৬৫৫ কোটি টাকা যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৩৫ কোটি টাকা। মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক ২০১৮ সালে মুনাফা করেছে ৫১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১৭ কোটি টাকা।
সাউথইস্ট ব্যাংক প্রথমবারের মতো মুনাফা করেছে ১ হাজার কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ৯০৬ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ৮১০ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৬৭২ কোটি টাকা। প্রাইম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫৭৫ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৩৭ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফায় ভাল প্রবৃদ্ধি এসেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকেরও। ২০১৮ সালে ব্যাংকটি প্রায় ৪৭৫ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৫৮ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংক ৭০৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে, ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ৬৫০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল। ফারমার্স ব্যাংক ছাড়া ভাল পরিচালন মুনাফা পেয়েছে নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও। ২০১৭ সালে ১৪৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পাওয়া মধুমতি ব্যাংক চলতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। এছাড়া ২০১৭ সালে ২০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পাওয়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক চলতি বছর ২০৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ২০৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে যা ছিল ১৮২ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারী খাতের অন্যান্য ব্যাংকেরও পরিচালন মুনাফায় ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের অবস্থা ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে আরও বেশি খারাপ হয়েছে। চলতি বছর বড় অঙ্কের পরিচালন লোকসান গুনেছে ব্যাংকটি। তবে সোনালী ব্যাংক খেলাপী ঋণ আদায় বাড়ায় ভাল করেছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকটি প্রায় ২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৭ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।
অলস পড়ে থাকা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার আমানত উচ্চসুদে কলমানি এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ধার দিয়ে ভাল মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক চলতি বছর প্রায় ৯৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৮৬৭ কোটি টাকা। প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পরিচালন মুনাফা পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ২০১৭ সালে যা ছিল ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। তবে ২০১৭ সালে মুনাফা ছিল ৫০৮ কোটি টাকা। অবশ্য এ সময় ব্যাংকটি লোকসানি শাখা ৩৩টি থেকে কমিয়ে ৯টিতে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ১১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।