ভোজ্য তেলের বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর ফলে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমলেও ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের ভোজ্য তেলের বাজার।
পাম তেলের সঙ্গে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের বাজারেও। এতে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দামই গত কয়েকদিনে দাম আরও ১০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতি কেজিতে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও তেল মিলছে না। আবার বাজারে সরবরাহও কম হওয়ায় ভোজ্য তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর বেশকিছু বাজারে তেল না থাকার কথা জানিয়েছেন দোকানিরা। এদিকে ঈদ সামনে রেখে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ায় বাজারে এখন সয়াবিনের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এক্ষেত্রে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্য তেল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ফলে চাহিদা মতো তেল মিলছে না। বিশেষ করে খোলা তেলের ঘাটতি বাড়ছে দ্রুত। তবে মিল মালিকরা বলছেন তারা চাহিদা অনুযায়ী তেলের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন মালিকরা।
দেশে ভোজ্য তেল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় পাম অয়েল। পণ্যটির চাহিদা পূরণ হয় মূলত ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির ভিত্তিতে। গত শুক্রবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা কার্যকর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই ঘোষণার প্রভাব শুরু হয়েছে দেশের বাজারে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি। যা আগে ছিল ১৬৮-১৭০ টাকা কেজি। সরকার নির্ধারিত মূল্য খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৩৬ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা কেজি। তিনদিন আগে পাম তেল বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৬২ টাকা কেজি। সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু ওই দামে বাজারে পাম অয়েল পাওয়া যায়নি। বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল সসরবরাহ কমিয়ে ফেলেছেন। একদিনে আটকে রাখতে পারলেই দাম বেশি পাওয়া যাবে বলে তারা মনে করছেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার দর তালিকায় দেখা গেছে, গতকাল সয়াবিন তেল (খোলা) প্রতি লিটার ১৬০ থেকে ১৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৮.৮ শতাংশ। গতকাল পাম অয়েল (খোলা) প্রতি লিটার ১৫৬ থেকে ১৬৩ বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৮ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১০.৭৬ শতাংশ। একইভাবে গতকাল পাম অয়েল (সুপার) প্রতি লিটার ১৫০ থেকে ১৬২ বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৫.৭৬ শতাংশ।