বর্ষার শুরুতেই দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যাচ্ছে রাজধানীতে। ঢাকার দুই সিটির প্রায় অর্ধেক ওয়ার্ডই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। শিগগিরই এই পরিস্থিতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরং রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা তাদের। ডেঙ্গুর এ ‘ভয়াবহ’ অবস্থায় আক্রান্তদের সুষ্ঠু চিকিৎসা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও রোগী ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ঢাকার দুই সিটিতে মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ বাড়িতে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর লার্ভা পজিটিভ পাওয়ার কথা জানিয়েছে অধিদফতর।
একইসঙ্গে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব রোগীর বেশিরভাগ অত্যন্ত জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসায় রোগী বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনাও।
ডিএনসিসির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এই ফলাফলের মানে এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। উত্তর-দক্ষিণ যা-ই বলি না কেন, আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি।
রাজধানীর দক্ষিণ সিটির হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগীদের তিল ধারণের ঠাঁই মিলছে না। অন্যদিকে উত্তর সিটিতে রোগীর চিত্র কম দেখা যাচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রি-মনসুন সার্ভের ফলাফল বলছে, দুই সিটিতে প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। একই শহরের হাসপাতালে রোগী ভর্তির আকাশ-পাতাল পার্থক্যের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৯ হাজার ৯৭১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪ এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৭৮৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে মারা গেছেন ৬১ জন। শুধুমাত্র গত মাসেই (জুন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। মারা গেছেন ৩৪ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ৪ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৯৩ জন। যাদের মধ্যে ১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে দক্ষিণ সিটির হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি। বিশেষ করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অনেক ডেঙ্গু রোগীর স্থান হয়েছে মেঝেতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থকর্মীদের। রোগী আরও বাড়লে চিকিৎসার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকার বাইরের রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো কতটা প্রস্তুত তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।