করোনার মহামারীর ধকল কাটিয়ে পোশাক খাত আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, তারা এখন আসন্ন বড়দিনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য বাজারগুলোর অর্ডারের অপেক্ষায় আছেন। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও মহামারীকালের শাটডাউনের ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে। গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় এখন অর্থনীতির পরিস্থিতি অনেক ভালো। ওই সময় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে ৩শ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের পোশাকের ক্রয় আদেশ স্থগিত বা বাতিল করেছিল। এতে ৪০ লাখ শ্রমিক ও হাজার হাজার কারখানা অনিশ্চয়তার মধ্যেপড়ে। কিন্তু এখন আবার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারি, মার্চ থেকে মের খারাপ সময় কাটিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা ক্রেতাদের সফলভাবে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই বাতিল হওয়া ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয় আদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ফিরে পাওয়া গেছে।’
পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ বছরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার আয় করে। এই পোশাকের বেশিরভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয়। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়, যেখানে শীর্ষে রয়েছে চীন। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি যেখানে প্রায় ৮৩ শতাংশ কমে ৫২ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল, তা জুলাই মাসে ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৩৯০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া মে-জুন সময়ে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে রপ্তানি এক বছর আগের তুলনায় ৪.৩ শতাংশ বেড়ে ২৯৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যার মধ্যে মূল অবদান পোশাক খাতের। জুলাই ও আগস্ট মিলিয়ে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫৭০ কোটি ডলারের।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, পোশাক খাত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের কৃষি খাতও ভালো করছে, রেমিট্যান্স আসছে। এসবই অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসে পশ্চিমা দেশগুলোয় মহামারী কী অবস্থা ধারণ করে, তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে এই পুনরুদ্ধারের গতি।’