বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ পুনরায় শুরু করার প্রস্তুতির মধ্যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল। তিনি মনে করেন, এই সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা শ্রম সংস্কারের যেকোনো উদ্যোগে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
গত ৭ই এপ্রিল দেশটির ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যান্ডি হল বলেন, এই সিন্ডিকেটের মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রভাব রয়েছে এবং ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এটি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়েছিল। তার ভাষায়, “অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় আসার জন্য অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য হন। অনেকে ভুয়া নিয়োগকর্তার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং চরম ঋণের ফাঁদে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।”
২০২৪ সালের শুরুতে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, যা অ্যান্ডি হলের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে উঠে আসে। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া গত বছরের মে মাসে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করে, তবে প্ল্যানটেশন ও সিকিউরিটি খাতে সীমিত নিয়োগ চলমান ছিল। প্রায় ১০ মাস স্থগিত থাকার পর শিগগিরই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে, ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
অ্যান্ডি হল ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে বলেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ২০২১ সালের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন এবং নেপালের সঙ্গে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তিও হালনাগাদ করা দরকার। তার দাবি, ‘চুক্তির যেসব ধারা সিন্ডিকেটদের পক্ষে সুযোগ তৈরি করেছে, সেগুলো বাতিল না করলে এই অনিয়ম কখনোই বন্ধ হবে না।”
তিনি বলেন, বহু শ্রমিক দায়িত্বহীন ও অনৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার শিকার হয়ে জীবনধ্বংসকারী অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে মালয়েশিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, ১৫টি দেশের সঙ্গে শ্রমচুক্তি পর্যালোচনা করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নতুন চুক্তির ঘোষণা আসেনি।
এ ছাড়া, তিনি মালয়েশিয়ায় ব্যবহৃত একটি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যেটি অননুমোদিত ব্যক্তিরা ব্যবহার করতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সিস্টেম সিন্ডিকেটের হাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও খরচ নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে বলেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে এমন কিছু ব্যক্তিকে ফেরত পাঠাতে সহায়তা চেয়েছে যারা মালয়েশিয়ায় থেকে ওই সিস্টেমের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করেছে।