বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১৬ সালে টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে প্রথম গণশুনানির আয়োজন করেছিল। প্রতিবছরই এ আয়োজনের কথা থাকলেও তা আর হয়নি। অবশেষে ১২ জুন বুধবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের মত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হলো।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে সেবার মান ও ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের নামে টাকা গচ্চা যাওয়ার ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। আবদুস সালাম নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, প্রতি সেকেন্ড পালসের প্যাকেজ কিনে কথা বললেও তার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।
গত ২৪ মে থেকে ৩ জুন বিটিআরসির ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের মাধ্যমে ২০২ গ্রাহক মোট ১ হাজার ৩১৯টি প্রশ্ন, অভিযোগ ও মতামত জানান। গণশুনানি সংশ্লিষ্ট কমিটি পরবর্তী সময় সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ১৬৫ জনকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
অভিযোগকারীদের একজন ছিলেন আতাউর রহমান। তিনি জানান, তার বৃদ্ধ মা গ্রামে থাকেন। মায়ের ফোনটি ফিচার, স্মার্টফোন নয়। হঠাৎ ব্যালান্স থেকে ৪৮ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এর কারণ জানতে চাইলে মোবাইল অপারেটর জানায়, ইন্টারনেটে গেম খেলার কারণে এ টাকা কাটা হয়েছে। আতাউরের প্রশ্ন, তার মা কখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। আর গেম খেলার তো প্রশ্নই ওঠে না।
এভাবেই অসচেতন মানুষের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা টাকা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন গ্রাহক শুনানিতে অংশ নিয়ে অভিযোগ করেন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার পরও টাকা কেটে নেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের কলড্রপ ও বিভিন্ন প্যাকেজ (ভয়েস, ডেটা বান্ডল) এবং এর মূল্য সম্পর্কে অভিযোগ ছাড়াও বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, সাইবার অপরাধ, মোবাইল ফোনে হুমকি, ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ফাইভ-জি, অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি, মোবাইল অপারেটরদের কলসেন্টারের মাধ্যমে সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ আসে।
গণশুনানিতে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের পক্ষপাতিত্ব করেছে অভিযোগ তুলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গ্রাহকরা অপারেটরদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তার পক্ষে অপারেটররা মতামত না দিয়ে কমিশন কেন তাদের পক্ষপাতিত্ব করছে?’
ভয়েস কলের মূল্যবৃদ্ধি, এমএনপির ডিপিং চার্জ, ফাইভ-জি নিয়ে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কমিশনের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। গণশুনানির শেষভাগে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি জানান, গ্রাহকের সব ধরনের সমস্যার সমাধানে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।