মোবাইল ডাটায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব)। একই সঙ্গে মূল্যসংযোজন কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তারা।
বুধবার (৯ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ।
এনবিআর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম। এমটব ছাড়াও ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি), বিড়ি শিল্প মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এমটব সভাপতি বলেন, কয়েক বছর ধরে মোবাইল খাতের রাজস্ব দেশের জিডিপির ১ শতাংশের বেশি ছিল। এ খাতের কর ও ফি-এর পরিমাণ ছিল সরকারি কর রাজস্বের সাড়ে ৪ শতাংশ। অর্থনীতিতে মোবাইল খাত সংশ্লিষ্ট করের অবদান এর আকারের চারগুণেরও বেশি। অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান জিডিপিতে আনুমানিক ৭ শতাংশ।
এ খাতে করপোরেট করের হার বেশি উল্লেখ করে এস এম ফরহাদ বলেন, ‘মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।’
বিড়িতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ দে আগামী বাজেটে বিড়িতে বিদ্যমান শুল্ক কমানো, অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করা, বাকিতে ব্যান্ডরোল দেওয়া, সরেজমিনে পরিদর্শন ছাড়া বিড়ি কারখানার লাইসেন্স প্রদান বন্ধের প্রস্তাব করেন।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম নকল ব্যান্ড রোল এবং নকল সিগারেট বন্ধ করার আহ্বান জানান।
এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সিগারেট-মদের ওপর রাজস্ব নির্ভরতা থাকবে। রাজস্বের বোঝা বাড়িয়ে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। অনেক সময় দেখা যায়, রাজস্ব বাড়িয়েও এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ভ্যাট ফাঁকি, চোরাচালানের জায়গা তৈরি হয়। এ কারণে সিগারেট, বিড়ির ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে পলিসি গ্রহণ করা হচ্ছে।
খাবার পানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব
বাংলাদেশ বেভারেজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ খাবার পানির ওপর অর্পিত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। এছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের উৎপাদনপূর্বক সরবরাহ পর্যায়ে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ ও পণ্য পরিবহন সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ রেয়াত গ্রহণের সুযোগ প্রস্তাব করেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. আনিসুর রাহমান উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তিনি কোমল পানীয়ের ওপর সব ধরনের কর মিলে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। এছাড়া সেবা আমদানির ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত ও আমদানি করা পরিশোধিত চিনিতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিও জানায় সংগঠনটি।
এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আপনাদের দাবি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এটা আমরা পর্যালোচনা করবো।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক (কাস্টমস নীতি), জাকিয়া সুলতানা সদস্য (ভ্যাট নীতি) এবং সামসুদ্দিন আহমেদ সদস্য (আয়কর নীতি)।