সোমবার, ১৮ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

যে কারণে দেশে দ্রুত অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হচ্ছে

প্রকাশঃ

গত বছরের অক্টোবর মাসে দেশে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর দুই মাস পর ডিসেম্বর মাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়। সপ্তাহখানেক হল র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ডেল্টা ধরনের করোনাভাইরাস বা ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

অ্যান্টিজেন টেস্ট এখন কী সংখ্যায় হচ্ছে?
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয় সেসময় প্রাথমিকভাবে দেশের ১০ টি জেলায় নির্ধারিত কিছু হাসপাতালে এই পরীক্ষার জন্য কিট পাঠানো হয়েছিল।

সিলেট জেলায় শুরুর মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সবগুলোতে অধিক নির্ভরযোগ্য আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে সবমিলিয়ে ৩৩৪ টি স্থানে এখন র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এপর্যন্ত সর্বমোট র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৮০ টি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজারের কিছু বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার ছিল র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এক সপ্তাহ আগেও দৈনিক অ্যান্টিজেন টেস্টের সংখ্যা অন্তত এক হাজার কম ছিল।

কোন জেলাগুলোতে এটি বেশি করা হচ্ছে?

শুরুতে গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও সিলেটে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এখন সবচেয়ে বেশি এই পরীক্ষা করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী যে জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার খুব বেশি সেখানে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগির জানিয়েছেন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সিলেট সহ দক্ষিণ-পশ্চিম ও সীমান্তবর্তী যেসব জেলাতে সংক্রমণের হার অনেক বেশি সেসব এলাকায় এটি বেশি করা হচ্ছে।

ঢাকাতেও নমুনা পরীক্ষার জন্য ব্রাকের যেসব বুথ রয়েছে সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে।

রাজশাহীতে ৬ই জুন পাঁচটি যায়গায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিক ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোতে মানুষজনের বাড়িতে গিয়েও পরীক্ষাটি করা হচ্ছে।

এখন কয়েকটি বাদে দেশের বেশিরভাগ সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মি. আলমগির।

কাদের এই টেস্ট করা হচ্ছে?

ডা. এএসএম আলমগির বলছেন, “যেসব যায়গায় সংক্রমণের হার বেশি সেখানে মূলত স্ক্রিনিং-এর জন্য পাড়ায় পাড়ায় বা বাড়িতে গিয়ে এই পরীক্ষাটি করা হয়।

এক্ষেত্রে যাদের সংক্রমণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করার মতো কোন উপসর্গ রয়েছে এমন কারোর নাক থেকে নমুনা নিয়ে একটা কিটে পরীক্ষা করা হয়।”

তিনি বলছেন, এতে ভাইরাস শনাক্ত হলে তাকে আর পিসিআর পরীক্ষা করার কথা বলা হয় না। কিন্তু উপসর্গ থাকার পরও যদি ভাইরাস শনাক্ত না হয় তখন অধিকতর পরীক্ষার জন্য তার নমুনা পাঠানো হয়।

এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাল অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা আসলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তিনি বলছেন যেসব অঞ্চলে সংক্রমণ অনেক বেশি, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশা মানুষের সংখ্যা বেশি তাদের এসব পরীক্ষা করা হয়।

যাদের সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হয় তাদের ওই সময়ের মধ্যে কয়েকবার অ্যান্টিজেন টেস্ট করে দেখা হয়।

যেখানে সংক্রমণ অনেক বেশি সেখানে উপসর্গ নাও থাকতে পারে এরকম ‘অ্যাসিম্পটমিক’ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।

স্থলবন্দর হয়ে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন তাদের ক্ষেত্রেও আসার সাথে সাথে একটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এরপরই তাদের ইমিগ্রেশন পার করে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই পরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে তাদের আরও পরীক্ষার দরকার আছে কিনা।

এই টেস্টের সুবিধা কি?

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ভাইরলজিস্ট ডা. সাবেরা গুলনাহার বলছেন “এই পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল দিতে পারে। ২০ মিনিটের মধ্যে এর ফল পাওয়া যায়। দ্রুত শনাক্ত মানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।”

এছাড়া এর খরচ খুব কম। পিসিআর টেস্টে সময় লাগে কম পক্ষে ছয় ঘণ্টা, খরচ হয় অনেক কারণ অনেক যন্ত্রপাতি লাগে, বায়োসেফটি আছে এমন ল্যাব লাগে, দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দরকার হয়।”

অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্টে তেমন কোন ব্যবস্থা লাগে না। একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে অল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে, আঙুলের আকৃতির একটি কিট ও দরকারি সল্যুশন সহ একটি টেবিলে থাকলেই হয়।

গাড়ির ভেতরেও যেকোনো যায়গায় বসেই করা যায়। কোন ল্যাব দরকার হয় না। এর জন্য দরকারি কিট বহনযোগ্য। চাইলে কোন ব্যক্তি নিজেও এই পরীক্ষা করতে পারেন। যুক্তরাজ্য সহ কিছু দেশে ইতিমধ্যেই ঘরে বেশি নিজেই পরীক্ষা করার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ডা. আলমগির বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হলে অ্যান্টিজেন ছাড়া উপায় নেই। তার ভাষায় সঠিক ফল দেবার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা ৮০ শতাংশ। তিনি বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি কিটের অনুমোদন করার পর এর ব্যাবহার বিশ্বব্যাপী বেড়েছে।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ