সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

রাজধানীর হাসপাতালের সামনের রাস্তায় শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা এবং ১০ প্রস্তাবনা

প্রকাশঃ

রাজধানীর ১৭টি হাসপাতালের সামনের রাস্তায় শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে আদর্শ মানের চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ওই হাসপাতালগুলোর বেশির ভাগ এলাকায় দিনের বেলায় আদর্শ মান ৫৫ ডেসিবল হওয়ার কথা। সেখানে এসব হাসপাতালের সামনের রাস্তায় শব্দদূষণের মাত্রা সর্বনিম্ন ৬৯.৭ ডেসিবরাজধানীর ল এবং সর্বোচ্চ ৮৯.৯ ডেসিবল পর্যন্ত পাওয়া যায়।

আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৭১ থেকে ৯০ ডেসিবল মাত্রা তীব্রতর শব্দদূষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গতকাল আন্তর্জাতিক শ্রবণ দিবসকে কেন্দ্র করে ‘প্রাণ প্রকৃতির ওপর শব্দদূষণের প্রভাব ও প্রতিকার’ শীর্ষক আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

মূল বক্তব্যে কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ক্যাপসের ১০ সদস্যের একটি গবেষকদল ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ব্যবহারের ভিত্তিতে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকার জন্য দিনের বেলায় নির্ধারিত আদর্শ মান মাত্রার (৫৫ ডেসিবল) সঙ্গে ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালগুলোর সামনে শব্দের মাত্রার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৭টি স্থানেই আদর্শ মান অতিক্রান্ত হয়েছে। আদর্শমান অতিক্রমের পরিমাণ বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের সামনে ২৬.৭ শতাংশ (৬৯.৭ ডেসিবল), যা ১৭টি স্থানের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ৬৩ শতাংশ (৮৯.৯ ডেসিবল), যা ১৭টি স্থানের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা বলেন, শব্দদূষণের ফলে জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয়, একেক ধরনের প্রাণীর শ্রাব্যতা সীমা একেক রকম, ফলে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের ফলে তারা দিশাহারা হয়ে যায়। সবাইকে সমন্বিতভাবে এই শব্দদূষণ রোধে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সব স্তরের মানুষকে সংযুক্ত করে শব্দদূষণ রোধে কাজ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যেসব এলাকায় শব্দদূষণ বেশি হয় ওই এলাকা থেকে প্রাণীরা অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হয়, ফলে উদ্ভিদের পরাগায়ণ ও প্রজনন ব্যাহত হয়।

শ্রবণব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর শব্দদূষণের বিশেষ প্রভাবটি হলো শ্রবণশক্তি হ্রাস। স্কুলগামী শিশুদের ওপর শব্দদূষণের প্রভাব বেশি।

প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রাশিদা বেগম বলেন, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের ফলে গর্ভপাত হতে পারে, এমনকি শিশুর জন্মের পর বধির হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শব্দদূষণ রোধে ১০ প্রস্তাব : শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর শতভাগ বাস্তবায়ন বিশেষ করে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে হর্ন না বাজানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতায় পরিবেশ ক্যাডার ও পরিবেশ পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে; বিধিমালার সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনগুলোতে (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট স্থাপন করা এবং তা মানার ব্যাপারে নিয়মিত মনিটর করা; ৯৯৯-এ কল সার্ভিসের পাশাপাশি অনলাইনে ই-মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড প্রদান করা যেতে পারে; পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরের সমন্বয় সাধন করা।

হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ নিশ্চিত করা, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন না করা, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি, চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স প্রদান করা এবং শব্দের মাত্রা অনুযায়ী যানবাহনের ছাড়পত্র দেওয়া; শব্দের মাত্রা হ্রাসের ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত নির্মাণ প্রকল্প ও শিল্প-কারখানা স্থাপনে ছাড়পত্র প্রদান না করা; উচ্চশব্দ এলাকায় ইয়ারমাফসসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার করা; ছাদ, বারান্দা, খোলা জায়গায় গাছ লাগানো (গাছ শব্দ শোষণ করে) এবং সড়কের পাশে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা; সন্ধ্যার পর ছাদ ও কমিউনিটি হলে গান-বাজনা না করা, ব্লেন্ডার, প্রেসার কুকার ও ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার না করা, ড্রিল ও গ্রাইন্ডিং মেশিনের ব্যবহার সীমিত করা।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ