দেশের ইতিহাসে এত বেশি রিজার্ভ আগে কখনই ছিল না। রেমিট্যান্স বাড়ায় গত দেড় মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৪০০ কোটি ডলার বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেব করে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৯মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সোমবার (১৭ আগস্ট) রাতে রিজার্ভের নতুন রেকর্ডের তথ্য জানিয়ে বলেন, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ একটার পর একটা রেকর্ড গড়ছে।’
মহামারীর এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবদান রাখার জন্য তিনি প্রবাসীদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
তিনি একই সঙ্গে বলেন, ‘এই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে সরকারের বড় ভূমিকা আছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত বছরের জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে সরকার তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে স্বজনকে ১০২ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীর কারণে হুন্ডি বন্ধ হয়ে যাওয়াও বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ার একটি কারণ।
এ ছাড়া সংকটকালে পরিবারের সহায়তার জন্য প্রবাসীরা যেমন বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন, আবার সংকটে পড়ে বিদেশের পাট চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলেও তা রেমিট্যান্স বাড়ায় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর সোমবার (১৭ আগস্ট) রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।
রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
গত চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) এই দাতা সংস্থাগুলোর সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে। এক বছর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.৩৬ বিলিয়ন ডলার।
করোনাভাইরাস মহামারীতে রেমিট্যান্সের গতিতে ছেদ তো পড়েইনি, বরং তা আরও বেড়েছে। গত জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
সবাই আশঙ্কা করছিলেন, কোরবানির ঈদের পর চলতি অগাস্ট মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমবে। কিন্তু তা ঘটছে না।