বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া আর্থিক লেনদেনের ব্যবসা করা যাবে না, এ বিষয়ে নতুন একটি আইন ‘পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম আইন-২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক তিন বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানা করা হবে। নতুন আইনে আর্থিক লেনদেনের তথ্য দেয়ার ব্যাপারে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে। খসড়াটি সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর আইনটি নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
‘এখন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ের যুগ। পেমেন্ট পদ্ধতিতেও ডিজিটালাইজেশন হওয়ায় পুরনো আইনের অনেক ধারা বর্তমানে কাজে লাগছে না। ফলে প্রযুক্তির অপব্যবহারের পরিধিও বাড়ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট আইনটি করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক’। বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি।
প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। বাণিজ্যিক বড় লেনদেন, ব্যাংক ট্রান্সফার মাধ্যমে ই-মানি, অনলাইন, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বেশ আগে থেকে হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবাসী আয় ও বিনিয়োগের সঙ্গে বাড়ছে মুদ্রার চাহিদা ও পরিশোধ ব্যবস্থায় জটিলতা। এসব কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আইনটি করতে যাচ্ছে।
পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট আইনে উল্লিখিত কয়েকটি বিধান:
আইনের আওতায় যেসব সেবা পাওয়া যাবে: নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলন, লেনদেন সম্পাদন, পরিশোধ দলিল ইস্যু, রেমিটেন্স সেবা, অর্থ স্থানান্তর, ইলেক্ট্রিক মুদ্রা বা অনুরূপ মুদ্রা বিষয়ক দলিল ইস্যু উল্লিখিত আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে অনলাইন বা টেলিযোগাযোগ সেবা অথবা নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আইনটির কার্যকরি এরিয়া: আইনটি কার্যকর হলে এর আওতায় থাকবে এমটিএম বুথ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আইন স্বীকৃতি মুদ্রা, ইলেক্ট্রনিক চেক ও মুদ্রা, ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার, এজেন্ট, গ্রহণকারী, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, চেক, চেকের ইলেক্ট্রক্যাল উপস্থাপনা, জাতীয় পরিশোধ ব্যবস্থা, ট্রানজেকশন, ক্যাশ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং, ‘নগদ অর্থ’ নিকাশ, নিকাশ ঘর, নিকাশ পদ্ধতি, নেট সম্পত্তি, নেট সমাপ্তি মূল্য, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ও সেবাপ্রদানকারী, পেমেন্ট কার্ড ও পরিশোধ দলিল।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন বহাল: এ আইনে বলা হয়েছে, অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সকল সেবাপ্রদানকারী ও গ্রহণকারীকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফইইউ) বিধান মেনে চলত হবে। পাশাপাশি আর্থিক সেবা ও পরিচালকারীর নিযুক্ত এজেন্টদের উল্লিখিত আইন ও বিধান মানতে হবে।
দণ্ড ও অপরাধ: অর্থের পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবসার লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বনিু ১০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা বা অনধিক ৩ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। একই দণ্ড হবে যদি বাতিল হওয়া লাইসেন্স দিয়ে এ ব্যবসা করা হয়। এছাড়া অর্থ সেটেলমেন্ট ও পেমেন্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা নির্বাহী কোনো নিরীক্ষকের কাজে বাধা দিলে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।
একই পরিমাণ জরিমানা করতে পারবে কোন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান- তাদের আর্থিক হিসাব, বহি বা নথিপত্র বিনিষ্ট করলে। আইনে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি এ আইনের বিধান বা আইনটি বাস্তবায়নকালে জারিকৃত বিধান বা নির্দেশ লঙ্ঘন বা বাধাগ্রস্ত করলে বা এক্ষেত্রে সহায়তা করলে তাকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা বা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। আইনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এ আইনের পরিশোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে পারবে না।