শুক্রবার, ৮ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

শিক্ষিত বেকার ঠেকাতে সর্বস্তরের শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও পরিমার্জন

প্রকাশঃ

দেশে শিক্ষিত জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার। পরিসংখ্যান বলছে প্রতি তিনজন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে একজন বেকার। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সর্বস্তরের শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও পরিমার্জনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক সলিমুল্ললাহ খান বলেন, ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এই তিন স্তর মিলে বুনিয়াদি শিক্ষা সঠিক পথে নেই। বেকারত্বের চাপ কমানো ও জ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে বুনিয়াদি শিক্ষায় বড় সংস্কার প্রয়োজন।’
তিনি মনে করেন, গোড়ায় বাদ দিয়ে ওপরদিকে সংস্কার করলে সুফল পাওয়া যাবে না।

জানা যায়, যুগোপযোগী কারিকুলাম তৈরি করতে গত ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, বাংলাদেশ রপ্তানি অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, সর্বাধিক দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যায়, এমন খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং আগামী দিনে কতজন দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যায়, তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।

দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। এরইমধ্যে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে এর অবস্থান চল্লিশ তম। ২০৪১ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫ তম বড় অর্থনীতি হওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ। বৃহৎ এই অর্থনীতির চালক হিসেবে দক্ষ শ্রমশক্তির বিকল্প নেই।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির হিসেবে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যান বিদেশীকর্মীরা। এই টাকার প্রায় অর্ধেক ১২ হাজার কোটি টাকা সরাসরি পাচার হিসেবে বিদেশে যায়। কারণ আড়াই লাখের বেশি বিদেশিকর্মীর অধিকাংশই এদেশে আয়ের ওপর কর পরিশোধ করে না। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভেতর দক্ষ জনশক্তি ও ব্যবস্থাপক তৈরির ওপর অনেকদিন ধরে জোর দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অভিন্ন কারিকুলাম তৈরিতে কয়েক বছর আগে উদ্যোগ নেয় সরকার। যার দায়িত্ব পড়ে সরকারের জাতীয় কারিকুলাম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হাতে। কিন্তু প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় এটি আলোর মুখ দেখছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নতুন নিয়মে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এই খাতে ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বেসিক ডিগ্রি দেয়ার পাশাপাশি দক্ষতার ওপরও একটি ডিগ্রি দেয়া হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থী বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারের নতুন নীতিতে বড় গুরত্ব পাচ্ছে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই বেকার থাকছে বলে মনে করছে সরকারের কর্মকর্তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মশিউর রহমান বলন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শুধু কর্মী তৈরির জায়গা নয় এখানে জ্ঞানের চর্চা থাকতে হবে। ১৫-২০ বছর আগের বাস্তবতায় যেসব সাবজেক্ট বা কোর্স চালু করা হয়েছিল এখন এসে দেখা যাচ্ছে এগুলো অনেকাংশে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে মাস্টার্স পর্যায়ে ইতোমধ্যে আমাদের কিছু কোর্স চালু রয়েছে। এগুলো আমরা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।’

জানা যায়, ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশ আসার আগেই উচ্চ শিক্ষার কারিকুলাম সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নতুন নির্দেশ আসায়, সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি অণুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহসিন বলেন, ‘সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরিতে অনেকগুলো নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। কিন্তু চাকরির বাজারে ওইসব বিভাগ পুরনো বিভাগের সঙ্গে সাংঘার্ষিক অবস্থা তৈরি করছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়ছে। একইসাথে বেসিক ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে বিকাশ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা ১২ সদস্যের একটি কমিটি করেছি। এখানে বেজা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। আমরা তাদের ডিমান্ডগুলো বোঝার চেষ্টা করছি। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমরা শিক্ষাসূচি প্রণয়ন করবো।’

শিক্ষাবিদ ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে উচ্চ শিক্ষা যে পদ্ধতিতে চলছে সেটি ভুল আবার যে নীতি নেয়া হচ্ছে সেটাও ভুল। দুটি ভুল যোগ করলে একটি শুদ্ধ হয় না। তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকার বাড়ছে সরকারের এই বক্তব্য আপাতত সত্য। মূল সত্য নয়। দেশের অর্থনীতির সঠিক বিকাশ হচ্ছে না। উন্নয়ন হচ্ছে, জাতীয় আয় বাড়ছে কিন্তু এর ন্যায্য বণ্টন হচ্ছে না। বড় একটা জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। তারা সঠিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ