স্মার্টফোন পছন্দমতো এবং প্রয়োজনীয় কাজের জন্য হাতে পাওয়া বেশ কঠিন কাজ। ফোন সম্পর্কে যদি ধারণা না থাকে, তাহলে রীতিমতো বিভ্রান্ত হতে হয়। কারণ, বাজারে প্রচুর বিকল্প। অসাধারণ কনফিগারেশনসহ সস্তা ব্র্যান্ডের বহু ফোন বাজারে আছে। ফলে কোনো ফোনই প্রকৃতপক্ষে আপনাকে পূর্ণ স্যাটিসফেকশন দিতে পারবে না। যদিও প্রতিদিনের ব্যবহার অথবা গেমিংয়ের মতো ভারী কাজের জন্য একটি ন্যূনতম কনফিগারেশনের ফোন খুঁজে পাওয়ার কিন্তু উপায় আছে।
আমরা এখানে শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোন সম্পর্কে আলোচনা করব। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী বা স্মার্টফোন সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ ব্যক্তি বেশি র্যামযুক্ত ফোন খুঁজে বেড়াবেন। কিন্তু ভালো পারফরম্যান্সের জন্য ফোনে অনেক বেশি র্যাম থাকাটা জরুরি নয়। ৪ জিবি র্যামের একটি ফোন নৈমিত্তিক কাজের জন্য যথেষ্ট। দৈনন্দিন সাধারণ কাজ যেমন-চ্যাটিং, সার্ফিং এবং ছবি তোলার কাজের জন্য এর বেশি র্যাম লাগে না।
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি পাবজি বা ফ্রিফায়ার ফ্যান হন, বা একজন সত্যিকারের গেমার হন, ভারী গেম খেলার জন্য ফোন ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৬ জিবি র্যামের ভেরিয়েন্ট আপনার জন্য উপযুক্ত। এটিই যথেষ্ট, তবে আরও ভালো পারফরম্যান্সের জন্য আরও ভালো এবং সর্বশেষ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যারসহ ফোন কেনাই ভালো।
এ গেল র্যামের ব্যাপার। এরপর প্রসেসর পরীক্ষা করুন। যদিও এটি প্রয়োজনীয় নয় যে আপনার ফোনে সর্বশেষ স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ এসওসি থাকতেই হবে। এমনকি এসএসডি ৬৭৫, ৭১০ এবং ৭১২ এসওসির প্রসেসরও বেশ শক্তিশালী।
প্রসেসর এবং এর আর্কিটেকচার ফোনের ভালো পারফরম্যান্সের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ৭, ১০, ১১ বা ১৪ ন্যানোমিটার (এনএম) আর্কিটেকচারের প্রসেসর বাজারে পেতে পারেন। সহজ কথায়, প্রসেসর যত কম এনএম-এর হবে, সেটির আর্কিটেকচার তত ভালো।
এ ছাড়া ক্লকিং বা ক্লক স্পিড কত সেটিও দেখতে হবে। সর্বোচ্চ ক্লক স্পিড ১.২, ১.৩ বা ১.৫ গিগাহার্টজ থাকতে পারে। ক্লক স্পিড বেশি মানে সেটির কর্মক্ষমতা ভালো। এই ক্লক স্পিড বেশি হলে সেই ফোন তত ফাস্ট হয়।
বেশির ভাগ ভালো ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর থাকে। বাজেট ফোনের জন্য মিডিয়াটেক হেলিও বা অন্য প্রসেসর থাকতে পারে। বলা বাহুল্য, এই বাজেট ফোনগুলোর প্রসেসর মানেই পারফরম্যান্সে কিছুটা সেক্রিফাইস করতেই হবে।
বাজারে দেখা যায়, বাজেট ফোন ব্র্যান্ডগুলো প্রতারণামূলক বিক্রি কৌশল অবলম্বন করে। এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর কৌশলটি হলো ক্যামেরার মেগাপিক্সেল। আধুনিক ফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই মেগাপিক্সেল দেখেই ফোন কেনেন। বেশি মেগাপিক্সেলের ফোন ভালো। তবে ক্যামেরার গুণমান কেবল এটির ওপর নির্ভর করে না। ক্যামেরার মান লেন্স এবং অ্যাপারচারের ওপর অনেকখানি নির্ভর করে।
লেন্সের অ্যাপারচার কম থাকলে কম আলোতে ছবি ভালো মানের হবে। এখন লো লাইটে ছবি তোলার ক্ষমতা খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। এটি কিন্তু সেন্সরের ওপরও নির্ভর করে। সনি আইএমএক্স সেন্সর, স্যামসাং সেন্সর, এক্সমোর-আরএস সিএমওএস সেন্সর ইত্যাদি এখন খুব ভালো মানের ছবি তুলতে পারে।
ফোনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ডিসপ্লে। অ্যামোলেড হলে ভালো। সুপার অ্যামোলেড হলে তো সোনায় সোহাগা! বাজেট ফোনের জন্য কমপক্ষে এলসিডি ডিসপ্লে থাকতে হবে। মসৃণ টাচ রেসপন্সের জন্য অ্যামোলেড বা সুপার অ্যামোলেড সেরা।
ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশি রিফ্রেশ রেট অবজেক্টকে মসৃণ করে তোলে। সাধারণত স্মার্টফোন ডিসপ্লেতে কমপক্ষে ৬০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট থাকে। অর্থাৎ ডিসপ্লেটি এক সেকেন্ডে ৬০ বার আপডেট বা রিফ্রেশ হয়। ৬০ হার্টজই স্ট্যান্ডার্ড। যদিও, ৯০, ১২০ এমনকি ১৪৪ হার্টজ রিফ্রেশ রেটের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এগুলো গেমিংয়ের জন্য ভালো।
ভালো ব্যাটারি ক্ষমতার ফোন এখন সবাই খোঁজেন। ৩ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি থাকা বাঞ্ছনীয়। যাঁরা অনেক বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারের ব্যাটারি থাকা ভালো। আজকাল ফাস্ট চার্জ সমর্থন করে এমন ফোন না নেওয়াটা বোকামি। ফাস্ট চার্জিং মানে ব্যাটারি চার্জিং মাত্রা সর্বনিম্ন ১৫ ওয়াট থেকে ২৫ ওয়াট পর্যন্ত। সেই সঙ্গে চার্জার কেবল অবশ্যই ইউএসবি টাইপ সি হতে হবে।
সংক্ষিপ্ত এবং সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ
সর্বশেষ স্পেসিফিকেশন যুক্ত ফোন কিনুন। অত্যাধুনিক চিপ-সেট এবং কমপক্ষে 8 জিবি র্যামসহ ফোন কিনুন। তবে আরও ভালো পারফরম্যান্স চাইলে নিচের স্পেসিফিকেশনগুলো যাচাই করুন।
প্রসেসিং পাওয়ার: চিপসেট এমন একটি অংশ, যা ফোনটি আপনার কমান্ডে কীভাবে এবং কত দ্রুত সাড়া দেবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যাটারি ব্যাকআপ: যেহেতু আজকাল স্মার্টফোন নির্ভরতা এবং ব্যবহার বাড়ছে, তাই নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপসহ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি থাকা উচিত।
ক্যামেরার গুণমান: আপনি কীভাবে ব্যবহার করতে চান বা যা চান তা ক্যামেরাবন্দী করতে পারে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরার ফোন কিনুন।
ফর্ম-ফ্যাক্টর: বিল্ড কোয়ালিটি এবং এরগনোমিক্সও গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্টফোনটি ক্যান্ডিড এবং ধরতে আরামদায়ক বোধ না করলে সেটি কিনবেন না।
২০২১ সালের হালনাগাদ অনুযায়ী:
আপনার ফোনে কমপক্ষে যে কনফিগারেশন থাকা চাই:
স্ন্যাপড্রাগন ৭১০ বা তার ওপরে প্রসেসর।
৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজের মেমোরি।
৬ ইঞ্চি এফএইচডি প্লাস ডিসপ্লে।
ডিসপ্লে: অবশ্য বাজেট কম হলে অ্যামোলেড বা কমপক্ষে এলসিডি হলেও চলে।
প্রসেসর: ২০১৮ সালের আগের সংস্করণ যেন না হয়।
র্যাম: ৬ থেকে ৮ বা তার বেশি। বাজেট স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ৪ জিবি।
ব্যাটারি: ৩৭০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার বা বেশি। বাজেট স্মার্টফোন হলে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার।
ক্যামেরা: এমপি (মেগাপিক্সেল) গণনা হাই-এন্ড স্মার্টফোনের জন্য কোনো ব্যাপার নয়। কারণ, তাদের খুব ভালো অপটিকস এবং সফটওয়্যার টুইক রয়েছে। বাজেট স্মার্টফোন এবং তিনটি ক্যামেরা লেন্স সেটআপ থাকলে সনি আইএমএক্স ৪২ মেগাপিক্সেল সেন্সর হলে খুবই ভালো হয়।
এককথায় বললে, প্রসেসর এবং এর আর্কিটেকচার (৭, ১০, ১১ বা ১৪ ন্যানোমিটার)। বেশি ক্লক স্পিড দেখতে হবে। প্রসেসর স্ন্যাপড্রাগন। বেশি র্যাম। ক্যামেরা। এইচডি স্ক্রিন ডিসপ্লে (সর্বনিম্ন)। ব্যাটারির ক্ষমতা এবং প্রযুক্তি। রেডিয়েশন লেভেল (SAR) মান (যত কম তত ভালো)।