হজযাত্রীর নিবন্ধন শেষ হলেও কোটা পূরণ হয়নি। হজের খরচ অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় এবার আটবার সময় বাড়িয়েও হজযাত্রীর কোটা পূরণ করতে পারেনি সরকার। সর্বশেষ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) হজের নিবন্ধনের সময় শেষ ছিল।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
ইতোমধ্যে হজের নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার ৩৫ এবং বেসরকারিভাবে এক লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এখনও কোটা পূরণে ৭ হাজার ৫০৩ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে।
মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, হজ ২০২৩ এর নিবন্ধন কার্যক্রম ১১ এপ্রিল শেষ এবং নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। সেসব হজ এজেন্সির হজযাত্রীর সংখ্যা ৯৭-এর নিচে তারা আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে অবশ্যই লিড এজেন্সি নির্ধারণ করে সমন্বয় করবে। সমন্বয়ের পরে হজ এজেন্সির বিপরীতে প্রযোজ্য গাইড ও মোনাজ্জেম সংখ্যা যোগ করে চূড়ান্ত কোটা সৌদি আরবে ই-হজ সিস্টেমে এন্ট্রির জন্য প্রেরণ করা হবে।
হজ এজেন্সির চূড়ান্ত কোটা সৌদি আরবে পাঠানোর পর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের পিলগ্রিম আইডি (পিআইডি) দেওয়ার জন্য সিস্টেমে উন্মুক্ত করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। এজন্য নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে ২৭ মার্চ এবং ৩০ মার্চ দু-দফা সময় বাড়ে। ওই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে শেষে নিবন্ধনের সময় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। শেষে আরও এক দফা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।
গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। সেই অনুযায়ী প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বাড়ে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে খরচ বাড়ে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বাড়ে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা। এবারের হজে যাওয়ার খরচ অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
পরে সৌদি প্রান্তের খরচ কমায় গত ২২ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি হজের প্যাকেজ মূল্য কমানোর ঘোষণা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তখন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই সরকারি প্যাকেজ মূল্য ৪১৩ সৌদি রিয়াল সমপরিমাণ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান হজ প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।
হজ এজেন্সিজগুলোও মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে, তাই বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।