হজের নিবন্ধনের সময় অষ্টমবারের মতো বাড়লো। কোটা পূরণ না হওয়ায় হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
সর্বশেষ বাড়ানো সময় অনুযায়ী, বুধবার (৫ এপ্রিল) হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় শেষ হয়। কিন্তু এখনও কোটা পূরণে প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে।
সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। নিবন্ধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত রয়েছে এবং উভয় ব্যবস্থাপনায় নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুযোগ আছে।
কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এবার হজের খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধন হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। এর আগে সাত দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ করা যায়নি। সৌদি আরবে সেবামূল্য কমার কারণে চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোও হয়েছে। কিন্তু এরপরও সাড়া মেলেনি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৯ হাজার ২১২ জন হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৯৯৬ জন এবং বেসরকারিভাবে এক লাখ ৯ হাজার ২১৬ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এখনও কোটা পূরণে ৭ হাজার ৯৮৬ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। এজন্য নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে ২৭ মার্চ এবং ৩০ মার্চ দু-দফা সময় বাড়ে। ওই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে শেষে নিবন্ধনের সময় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।
গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। সেই অনুযায়ী প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বাড়ে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে খরচ বাড়ে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বাড়ে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা। এবারের হজে যাওয়ার খরচ অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
পরে সৌদি প্রান্তের খরচ কমায় গত ২২ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি হজের প্যাকেজ মূল্য কমানোর ঘোষণা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তখন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই সরকারি প্যাকেজ মূল্য ৪১৩ সৌদি রিয়াল সমপরিমাণ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান হজ প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।
হজ এজেন্সিজগুলোও মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে, তাই বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।