অবৈধ পথে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) দেশে আনাকে নিরুৎসাহিত করতে এ পর্যন্ত পাঁচ সহস্রাধিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। এবার এসব এজেন্টের সুবিধাভোগীদের হিসাব জব্দেরও উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার (১৬ নভেম্বর) হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনা সন্দেহভাজন ২৩০টি হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অ্যাকাউন্ট জব্দের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হুন্ডি আসা ঠেকাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বিএফআইইউ সব ব্যাংক এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এ ধরনের লেনদেন শনাক্ত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাঠাবে না, এমন শর্তে ২৩০টি হিসাব আবার সচল করা হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হবে। এরপরও হুন্ডি এসেছে প্রমাণিত হলে পুরো অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। একই সঙ্গে সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্ন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএফআইইউর আগে কয়েক লাখ এজেন্টের তথ্য বিশ্নেষণ করে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সারা দেশের ৫ হাজার ৪১৯ এমএফএসকে চিহ্নিত করে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এসব এজেন্টশিপ বাতিল করে এবং তালিকা দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। এর ভিত্তিতে সিআইডি ইতোমধ্যে ৫টি মামলা করেছে। এছাড়া কয়েকজন ব্যক্তিকে আটক করেছে। সংস্থাটি ওই তালিকার ভিত্তিতে আরও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে একটি চক্র। এরপর প্রবাসীর সুবিধাভোগীর বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন এমএফএস নম্বর এখানকার এজেন্টকে দেওয়া হয়। এজেন্ট নির্ধারিত পরিমাণ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সুবিধাভোগীর নম্বরে পৌঁছে দেয়। এ উপায়ে অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রা বাইরেই থেকে যায়। দেশের বাইরে সংগ্রহ করা ওই অর্থ পরে অর্থ পাচারকারীরা বেশি দামে কিনে নেয়।
এদিকে হুন্ডির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সতর্ক করেছে। সেখানে বলা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের প্রিয়জনদের জানানো যাচ্ছে যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনও অবৈধ পথে) পাঠানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের উদ্দেশে বলেছে, ‘‘দেশের বাইরে অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনও পথে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠান। দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন। আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।”