২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত । এ প্রকল্পের জন্য চীন সরকার বাংলাদেশকে ১১২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৯ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও চীনের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে মঙ্গলবার ২৬ অক্টোবর ‘ঢাকা আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য চুক্তি সই হয়।
‘প্রিফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিটের’ (পিবিসি) আওতায় এই ঋণ পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২ শতাংশ সুদে ২০ বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। ইআরডি উপসচিব মাসুমা আক্তার বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিটি দুই দেশের করেসপন্ডিং -এর মাধ্যমে হয়েছে।”
অর্থাৎ ইআরডি বাংলাদেশ পক্ষের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র তৈরি ও স্বাক্ষর করে চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠায়। ২৬ অক্টোবর চীনা এক্সিম ব্যাংক তাদের পক্ষে স্বাক্ষর করে প্রয়োজনীয় নথি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং চীনা এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি জেনারেল মানেজার ঝ্যাং তিয়ানকিন স্বাক্ষর করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সাধারণত পিবিসি ঋণের ক্ষেত্রে সুদ ছাড়াও ঋণ প্রদানকারী দেশ থেকে পণ্য ও সেবা নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি শর্ত থাকে। এই প্রকল্পের ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরণের শর্ত আছে কীনা জানতে কয়েকবার ফোন করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে সাড়া দেননি।
গত ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় এই প্রকল্পটিসহ মোট ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়নে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই সমঝোতার আওতায় ইতিমধ্যে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে ৮ প্রকল্পে ৭৮০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সম্পন্ন করেছে। তারাই ধারাবহিকতায় এবার ঢাকার আকাঙ্খিত এই প্রকল্পের চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হলো।
১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে ৬৫ শতাংশ চীনা ঋণ যোগান দেওয়ার কথা রয়েছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ৩০টি জেলায় যানবাহন চলাচলে যানজট দুর করতে সরকার গত ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। আগামী বছরের জুন মাসে এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চীনা অর্থায়নে বিলম্বের কারণে প্রকল্পটি শুরু করতেই অনেক দেরি হয়ে যায়।
এরপর চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পর সম্প্রতি প্রকল্পটির অর্থায়ন সমস্যা কেটে গেছে বলে ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন এই মন্ত্রী। ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে ওই দিন মন্ত্রী জানান।
প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উড়াল সড়কের মাধ্যমে আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড) ২৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)।
এক্সপ্রেসওয়েতে থাকছে ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র্যাম্প, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ৪ লেইনের মহাসড়ক, ১ দশমিক ৯১৫ কিলোমিটার নবীনগর ফ্লাইওভার, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ৪ লেইনের সেতু, ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা।