২৮ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন বছরের জন্য এ তেল আমদানিতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৪১তম সভায় ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে। এসব ক্রয় প্রস্তাবনার মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি প্রস্তাবনা ছিল।
অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৮৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন খাত (জিওবি) হতে ব্যয় হবে আট হাজার ১০৭ কোটি ৭৯ লাখ চার হাজার ৪৫৯ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক, এডিবি, আইটিএফসি ও জাইকা হতে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে আট হাজার ৫১৩ কোটি আট লাখ ৯১ হাজার ১৩৯ টাকা।
সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, আজ মোট ১৩টি প্রস্তাব আনা হয়েছিলো। এছাড়া টেবিলে আরও তিনটি প্রস্তাবসহ মোট ১৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের জনশুমারির প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সভায় মোট ১৫টি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) ২০২২ সালে এডিএনওসি (ADNOC), আবুধাবি এবং সৌদি আরবের সৌদি এ্যারামকো থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) সাত হাজার ৪৬৭ কোটি ছয় লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া বিপিসিকে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য সিঙ্গাপুরের প্যাকেজ-এ’তে পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল, প্যাকেজ-বি, ডি ও ই’তে ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড এবং প্যাকেজ-সি’তে সিঙ্গাপুরের ভিটো এশিয়া পিটিই লিমিটেড থেকে মোট ১২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সাত হাজার ৬২৭ কোটি চার লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন খুলনা ওয়াসা কর্তৃক “খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন” প্রকল্পের প্যাকেজ নং এসএন-২ (SN-2) এর আওতায় নির্মাণকাজ চায়না জিও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কাছ থেকে ৮৩০ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬১ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কর্তৃক “হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)” প্রকল্পের ভেরিয়েশন বাবদ ২০০ কোটি ৯২ লাখ ২৩ হাজার ২০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাপানের (১) নিপ্পন কিউও. কোং.লিমিটেড, (২) ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল কোং লিমিটেড; সিঙ্গাপুরের (৩) সিপিজি কনসালট্যান্ট পিটিই. লিমিটেড এবং বাংলাদেশের (৪) ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক খাগড়াছড়ি জেলার জন্য ‘প্রোগ্রেসিভ’ শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ২২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় এবং রাঙামাটি জেলার জন্য ‘আশ্রয় অঙ্গন’ শিরোনামের প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৫৫ লাখ ৩ হাজার টাকায় ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট এজেন্সি (আইএসএ) হিসেবে উল্লিখিত দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।