করোনাভাইরাসের প্রথম দফা সংক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে গুছিয়ে উঠছিল আকাশপথ। কিন্তু হঠাৎ তছনছ সাজানো আকাশপথ। যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি পাওয়ার পর আতঙ্কে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হতে চলেছে।
গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে দেশটির সঙ্গে বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। সবমিলে অন্তত ৪০টি দেশের আকাশপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে বিমানের ২৫টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। লন্ডন ফ্লাইট আজকালের মধ্যে বন্ধের আভাস দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। ফ্লাইট বন্ধের পাশাপাশি কয়েকটি দেশের জাহাজ চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে দেশের এভিয়েশন খাতের বড় বাজার সৌদি আরব ও ওমানের আকাশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার প্রবাসী। বাংলাদেশ বিমানে করে সৌদি আরব যেতে (আগামী সাত দিন) ১১ হাজার ১০০ টিকিট কাটা ছিল প্রবাসীদের। সৌদি কর্র্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিমান পরিচালনা বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’ মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করিনি। তারা এক্সেস দিচ্ছে না বলে আমাদের বিমান যেতে পারছে না।’
সিনিয়র সচিব জানান, করোনায় বিমানের প্রায় ৩ হাজার এবং পর্যটন খাতের ক্ষতি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনেক খাত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। একক মন্ত্রণালয় হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে আমরা ধীরে ধীরে একটা পর্যায়ে চলে আসছিলাম। বিমানবন্দর, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট খুলে দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৯টি এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনা করত। সব ফ্লাইটের মধ্যে যাত্রীবাহী ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ১৯৮টি। আর কার্গোবাহী ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। সবই এখন আবার হুমকিতে পড়ল বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, এল সালভেদর, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি ও ভারত যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায় বছরজুড়ে এভিয়েশনের বাজার ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। সম্প্রতি পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে নানা প্রয়াস চালানো হচ্ছিল। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষতি কাটিয়েও উঠেছিল এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু হঠাৎ ‘সবকিছু শেষ’ হতে বসেছে। বিশেষ করে সৌদি আরবে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আগামী এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিমানের ১১ হাজার ১০০ টিকিট কাটা ছিল প্রবাসীদের। বেশিরভাগ প্রবাসীর আকামার মেয়াদের তারিখ প্রায় শেষদিকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বিমানের বেশিরভাগ ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্লাইট চালু আছে। এগুলোও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আজকালের মধ্যে লন্ডন ফ্লাইটও বন্ধ ঘোষণা আসতে পারে। ইতিমধ্যে বিমানের ২৫টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি এখনো ঘোলাটে।’