আকাশপথে করোনা পজিটিভ যাত্রী আসার হার অনেকাংশে কমে গেছে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সংখ্যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। তবে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হযরত শাহজালালসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগী বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছেন। সিভিল এভিয়েশনসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কড়াকড়ি থাকার পরও সনদ ছাড়া যাত্রীরা টাকার বিনিময়ে হেলথ কার্ড পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, আমরা চাই সবাই আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি দেশে-বিদেশে যাওয়ার হেলথ কার্ড পান তাহলে এটা দুঃখজনক। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বিদেশে চলে গেলে সেসব দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
নেগেটিভ সনদ ছাড়া করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের (সেকেন্ড ওয়েভ) সংক্রমণ ঠেকাতে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া বিদেশ থেকে আগত যাত্রী সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গত ৫ ডিসেম্বর নির্দেশনা জারি করে বেবিচক।
এতে বলা হয়, দেশি-বিদেশি কোনো ফ্লাইটেই আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। নির্দেশনা অমান্য করায় রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ একাধিক দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্স ও এর যাত্রীদের আর্থিক জরিমানা করেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৬২ হাজার ৬৪৪ জন যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৮২১ জন যাত্রী আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরির করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া চলে আসেন। কেউ কেউ আবার এন্টিজেন টেস্টে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া আবার কেউবা করোনা পজিটিভে আক্রান্ত হওয়া সত্তে¡ও চলে আসেন।
সনদ ছাড়া যারা এসেছেন তাদেরকে সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি ও আশকোনা হজ ক্যাম্পে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে এবং পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
করোনার আরটি পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া কিংবা করোনা পজিটিভ যাত্রী নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কারণে যেসকল এয়ারলাইন্সকে জরিমানা করা হয় তারা হলো মালদিভিয়ান এয়াইলাইন্সকে, এয়ার এশিয়াকে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে, সউদী এয়ারলাইন্স এবং ইতিহাদ এয়ারওয়েজ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বেবিচকসহ বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার ব্যাপক তৎপরতা ও কঠোরতার ফলে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স আরটি পিসিআর ল্যাবরেটরিতে করা করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করছে না। শুরুর দিকে কোনো কোনো ফ্লাইট সর্বোচ্চ তিন শতাধিক সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করলেও বর্তমানে তা এক দুইজনে নেমে এসেছে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় চলতি বছরের শুরুর দিকে কয়েক লাখ যাত্রী দেশে আসেন। সে সময় কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করা হয়নি। বরং বিমানবন্দরের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ২ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে করোনা আক্রান্ত যাত্রীকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। অনেকে পজিটিভ সনদ নিয়ে এলেও বিমানবন্দরে টাকার বিনিময়ে তা নেগেটিভ করা হয়। এমন কয়েকটি ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।