পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাবসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে নানা ধরনের ঝুঁকি থাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ‘রিন্যুয়েবল এনার্জি রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট, পাইলটিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স’নামে একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩০ কোটি ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। এটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানির উৎসের অনুসন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই ও পাইলটিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি একদিন শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া এক সময় শোনা যায় বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। কিন্তু এখন সেই গ্যাস নেই। কয়লার ক্ষেত্রে শুধু বড়পুকুরিয়া ছাড়া আর কোনো খনি থেকে কয়লা উত্তোলন সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে কয়লাসহ জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে।যেসব দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে সেসব দেশ যে কোনো সময় তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারে। বলতে পারে আর বিক্রি করব না। আবার দামও বাড়িয়ে দিতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির এ রকম নানা সমস্যা রয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। এটাকে ক্লিন এনার্জি বলা যায়।
বর্তমান নীতিমালায় মোট উৎপাদিত জ্বালানির ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা থাকলেও আসছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। এ অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির আনুপাতিক হার কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রকল্পটি নিয়ে ৩০ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে এ বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (স্রেডা)।
পিইসি সভা সূত্র জানায়, সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় ও বৈদেশিক কতজন পরামর্শক নিয়োগ করা হবে সেটির সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাবে (টিএপিপিতে) উল্লেখ করতে হবে। কিসের ভিত্তিতে স্থানীয় পরামর্শক বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক পরামর্শক বাবদ ৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, সেটি সভায় জানতে চাওয়া হয়। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনার পর পরামর্শক ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর কথা বলা হয়। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আদার ইক্যুপমেন্ট ফর রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড পাইলটিং বাবদ প্রাক্কলিত ৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার সংস্থান রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রকল্পের ডমেস্টিক ট্রাভেল বাবদ ১০ লাখ টাকার সংস্থান রাখারও যৌক্তিকতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন করা হয়। একই সঙ্গে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি একটি কার ও তিনটি মাইক্রোবাস ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রয়োজনীয়তার ব্যাখা চাওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রিন্টিং অ্যান্ড বাইন্ডিং বাবদ ১৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, বুকস অ্যান্ড প্রিয়ডিক্যাল বাবদ ৪ লাখ টাকা এবং এন্টারটেইনমেন্ট এক্সপেনসেস বাবদ ৩ লাখ টাকা বেশি বলে মনে হওয়ায় এসব ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।