যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি আভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে আরও কঠিন অসুস্থতার সৃষ্টি করছে এবং তা জলবসন্তের (চিকেন পক্স) মতো সহজে ছড়িয়ে পড়ছে।
আজ শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
এই স্লাইড প্রেজেন্টেশনটিতে কিছু অপ্রকাশিত ডেটা আছে, যেখানে বলা হয়েছে- ভ্যাকসিন পেয়েছেন এরকম মানুষ ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষদের মতো একই হারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারেন।
সিডিসির পরিচালক রোশেলি ওয়ালেনস্কি নথিটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এই প্রেজেন্টেশনটির বিষয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে ওয়ালেনস্কি সিএনএনকে বলেন, ‘আমার ধারণা মানুষের এখন বোঝা উচিত যে, আমরা রাখাল বালকের গল্পের মতো সবাইকে মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছি না। বিষয়টি গুরুতর। এটি সবচেয়ে বেশি সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ভাইরাসটি জলবসন্ত ও হামের মতোই দ্রুত ও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
গত মঙ্গলবার ওয়ালেনস্কি ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়েছেন এরকম মানুষদের জন্য একটি পরিবর্তিত স্বাস্থ্য নীতিমালা প্রকাশ করেন, যেটি বিতর্কিত হয়েছে।
তিনি জানান, ভ্যাকসিনের ডোজ নেওয়া শেষ করেছেন এরকম মানুষদেরকেও ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে বা আগে হয়েছে এরকম জায়গায় (ঘরের ভেতরে) মাস্ক পরে থাকার সুপারিশ করছে সিডিসি।
ওয়ালেনস্কি’র এই পরিবর্তিত নীতিমালাকে সমর্থন করার জন্য আজ সিডিসি কিছু ডেটা প্রকাশ করবে।
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তিনি আরও জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অন্যান্য কর্মী এবং দর্শনার্থীদের সবাইকে সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে হবে।
সিএনএনকে ওয়ালেনস্কি বলেন, ‘এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের অনেক কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
সিডিসি’র প্রেজেন্টেশনটিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস জলবসন্তের (চিকেন পক্স) মতোই সংক্রামক। একজন সংক্রামিত মানুষ গড়ে আরও আট থেকে নয় জন মানুষকে সংক্রামিত করতে পারেন। প্রাথমিক ধারণায় এটিকে ঠাণ্ডা লাগার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল, যেটির ক্ষেত্রে একজন সংক্রামিত ব্যক্তি গড়ে এক থেকে দুইজন মানুষকে সংক্রামিত করতে পারেন।
সংক্রমণ ঘটানোর হারের একক হিসেবে ধরা হয় ‘আর জিরো’-কে।
ওয়ালেনস্কি সিএনএনকে বলেন, ‘আট অথবা নয় মানের আর জিরো সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন রোগের সংখ্যা খুব বেশি নেই।’
তিনি আরও জানান, একজন ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষ একজন ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষের মতো একইহারে ভাইরাসটিকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষ ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রামিত হলে তাদের শরীরে যে পরিমাণ ভাইরাসের অস্তিত্ব দেখা যায়, একই পরিমাণ ভাইরাস একজন ভ্যাকসিন না নেওয়া আক্রান্ত মানুষের শরীরে দেখা যাচ্ছে।
এমোরি ভ্যাকসিন সেন্টারের প্রধান ড. ওয়াল্টার ওরেনস্টেইন সিডিসি’র প্রেজেন্টেশনটি পর্যালোচনা করে বলেন, ‘শেষ কথা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষেরা অসুস্থ না হলেও ভাইরাসটির দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছেন এবং তাদের থেকে ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষদের মতো একই পরিমাণ ভাইরাস ছড়াচ্ছে।’
তবে প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষেরা অধিকতর নিরাপদ। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশেরও বেশি কঠিন অসুস্থতাকে প্রতিহত করতে পারে, তবে এটি সংক্রমণ বা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে কম কার্যকর।
ভ্যাকসিন কঠিন অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর সম্ভাবনা দশ শতাংশ কমিয়ে আনে এবং সংক্রমণের ঝুঁকিকে তিন শতাংশ কমায় বলে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়।