দেশের সিংহভাগ অর্থ পাচার হয়ে থাকে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে। দুদকের তৎপরতায় একক সেক্টর হিসেবে সর্বোচ্চ মামলা ও গ্রেপ্তার হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। উদ্ধার হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধে দুদকের পাশাপাশি একাধিক সংস্থা কাজ করলেও ব্যর্থতার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দিকে আঙুল তোলা হয়।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯-এর ওপর এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। সভায় সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সেক্টরে বিদ্যমান দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে এবং তা দমনে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কেউই ধোয়া তুলসী পাতা নই। আমরা আমাদের ভুল এবং দুর্বলতাও স্বীকার করি। আমরা নিজেরা নিজেদেরকে প্রভাবিত ভাবতে পারি; তবে বিগত তিন বছরে সরকার, রাজনৈতিক দল কিংবা কথিত ক্ষমতাবানরা দুদককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই বলেন মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যর্থতার জন্য দুদকের দিকে আঙুল তোলা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দুদকের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থা এখন এ বিষয়ে কাজ করে। দুদক শুধু ঘুষ ও দুর্নীতিসম্পৃক্ত মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। মানি লন্ডারিংসংশ্লিষ্ট বাকি ২৬টি অপরাধের তদন্ত অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।’
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দেশের সিংহভাগ অর্থ পাচার হয়ে থাকে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে। আমরা রাজস্ব বোর্ডের কাছে ওভার ইনভয়েসিংয়ের তালিকা চেয়েছি। প্রয়োজনে তালিকা ধরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘একক সেক্টর হিসেবে সর্বোচ্চ মামলা ও গ্রেপ্তার হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। বেসিক ব্যাংকের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে নগদ জমা হয়েছে। কমিশনের মামলার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে চুরি হওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘কমিশনের মিশনে দুর্নীতির গতি-প্রকৃতি নির্ণয় থাকা উচিত। কাজের মধ্যে স্বচ্ছতার দৃশ্যমান মানদণ্ড থাকবে। কমিশনের প্রতি মানুষের ভয় ও শ্রদ্ধা থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সহজ হবে। চিকিৎসকদের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং ওষুধের স্যাম্পল বোমার মতো ভয়ংকর হয়ে উঠছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে দুদকের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দুদকের উচিত মেগা খাতের দুর্নীতি দমনে অধিকতর মনোনিবেশ করা।’ তিনি দুদকের মতো সার্বিকভাবে সরকারে একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
এ ছাড়াও উক্ত মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, কণ্ঠশিল্পী হায়দার হোসেন প্রমুখসহ আরও অনেকেই।