বাংলাদেশ ও ভারত এই দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভাবেই ভাল, কিন্তু দঃখের বিষয় যে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন (‘ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার’) বিমান বাংলাদেশ ও এয়ার ইন্ডিয়া কারওে এই দুই রাজধানীর মধ্যে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই।
অথচ একসময় বিমান ও এয়ার ইন্ডিয়া দুই দেশের সরকারের এই দুই সংস্থাই ঢাকা-দিল্লির মধ্যে সরাসরি বিমান পরিচালনা করত, যদিও বেশ কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। আর এ সুযোগে ভারতীয় বেসরকারি বিমান সংস্থা জেট এয়ার গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ রুটটিতে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে।
যেহেতু রুটটিতে তাদের একচেটিয়া ব্যবসা সেই সুযোগে অফ সিজনেও জেট রিটার্ন ফ্লাইটে ভাড়া নিত ৪২ থেকে ৪৮ হাজার টাকা। তিন-চার বছর ধরেই এ পরিস্থিতির পুরো ফায়দা লুটে নিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি।
ঢাকা-দিল্লির মধ্যে আকাশ পথে যাওয়ার একমাত্র অপশন ছিল জেট এয়ারওয়েজ। ফলে জেট এয়ার বেশি ভাড়া রাখা সত্ত্বেও এই ফ্লাইটে যেতে বাধ্য হতেন যাত্রীরা। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী বা সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের ঢাকা থেকে দিল্লি যেতে হলে জেট ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু গত মাস থেকে ঢাকা-দিল্লীর একমাত্র অবলম্বন সেই জেট এয়ারও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় জেট এয়ারের ঢাকা অফিসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
এয়ার টিকেট বুকিং কোম্পানি এস এস ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী দীপক মন্ডল বলেন, বিমান বাংলাদেশ ও এয়ার ইন্ডিয়া বন্ধ থাকায় গত কয়েক বছর ঢাকা-দিল্লি রুটে একমাত্র ফ্লাইট পরিচালনা করত জেট এয়ার। কিন্তু লোকসানের কারণে তাদের সংস্থাটি এখন ডুবতে বসেছে। ফলে এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি।
তিনি বলেন, জেট এয়ারের ১২৬টি বিমান বিশ্বের বিভিন্ন রুটে পরিচালন করত। লোকসানের কারণে এখন মাত্র ৫৪টি বিমান চালাতে পারছে কোম্পানিটি। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ রুট ছাড়া বাকি রুটগুলোতে তারা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কোম্পানিটিকে সহায়তার চেষ্টা করছে। তবে মনে হয় না এটি আর দাঁড়াতে পারবে।
বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা জানান, অতীতে বাংলাদেশ বিমানসহ একাধিক এয়ারলাইনস ঢাকা-দিল্লি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এ সময় তাদের ব্যবসাও ভালো ছিল। একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২০১৩ সালের ২৩ মে এ রুটে বিমানের একটি ৭৩৭ বোয়িং উড়োজাহাজ দিয়ে সপ্তাহে দুটো ফ্লাইট অপারেট করা হতো। তখন ঢাকা-দিল্লি-ঢাকার ভাড়া ছিল ২২ হাজার ৪০০ টাকা। যাত্রীও মোটামুটি বেশ ভালোই হতো। হঠাৎ ২০১৪ সালের জুনে লোকসানের অজুহাতে বিমান ঢাকা-দিল্লি ফ্লাইট স্থগিত করে দেয়। এর পর থেকে বিমান এ রুট বন্ধ রেখেছে।
বাংলাদেশ বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মিরাজ বলেন, এখন আবার যাত্রী-চাহিদার কথা ভেবে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আশা করছি এ বছর থেকেই ঢাকা-দিল্লি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু হবে।