জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ১২তম বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) বুধবার (০৮/০৫/২০১৯ইং) ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুল হক এবং ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার সাবেরা ইসলাম, মসিহ্ মালিক চৌধুরী এফসিএ, এ কে ফজলুল আহাদ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, অজিত কুমার পাল এফসিএ, মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, এ কে এম শামছুল আলম সিইও এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ, ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ জিকরুল হক এবং মোঃ তাজুল ইসলাম ও কোম্পানী সচিব হোসেন ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, সিএফও এ কে এম শরীয়ত উল্যাহ এফসিএএসিসিএ -সহ মহাব্যবস্থাপকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে,২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জিডিপি অর্জনকারী পাঁচ দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার ৮.১৩ শতাংশ হতে পারে। ২০১৮ সালে মাথাপিছু আয় ১,৭৫১ মার্কিন ডলার ছিল যা চলতি বছরে ১,৯০৯ মার্কিন ডলার অর্জিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াটা এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়, একটি সম্ভাবনা। দেশের এমন অগ্রযাত্রার অন্যতম অংশীদার হিসেবে জনতা ব্যাংককেও দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। জনতা ব্যাংক কোনো প্রকার ফি/চার্জ না নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (Safety Net Program) সহ নানা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা। এ সকল দায়িত্ব পালন সত্ত্বেও জনতা ব্যাংক ২০১৮ সালে ৯৭৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের চেতনায় ইতোমধ্যে Core Banking Solution (CBS) এর আওতায় ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু হয়েছে। নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনতা ব্যাংকে jbCERT (Janata Bank Computer Emergency Response Team) গঠন করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে যা কম্পিউটারের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি, দূর্বলতা, সাইবার অপরাধ মোকাবেলার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা, আত্মসাৎমূলক কর্মকান্ড, তথ্যের সঠিকতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করবে। এছাড়া অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নীতকরণসহ সমসাময়িক প্রযুক্তি যেমন: ব্লকচেইন (Blockchain), AI (Artificial Intelligence), IoT (Internet of Things) ইত্যাদি ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিসহ ব্যাংকিং কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত গাইডলাইন, সার্কুলার ও বিধিবিধান পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে Gap Analysis এর উপরও বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ তাঁর বক্তব্যে ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আর্থিক ফলাফলের বিস্তারিত বিবরনসহ ভবিষ্যত কর্মপন্থা তুলে ধরেনঃ-
বৃহৎ দু’টি গ্রুপভুক্ত ঋণ খেলাপি হওয়ায় ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, সরকারের নির্দেশনানুযায়ী ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কঠোর অনুশাসনের ফলে জনতা ব্যাংক অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও ব্যবসায়িক সূচকে ইতিবাচক সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ সাফল্যের মূলে রয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের যথাযথ নীতি নির্ধারণ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তদারকি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সকল স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দের অব্যাহত প্রচেষ্টা।
তিনি ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর কিছু উল্লেখযোগ্য সূচক উপস্থাপন করেনঃ-
– ২০১৮ সালে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬,৬৬৮ কোটি টাকা, যা বিগত ২০১৭ সাল হতে ৭.৫৩% বা ৬,০৬৯ কোটি টাকা বেশি;
– ২০১৮ সালে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ৪.০২% বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭,৫৫৫ কোটি টাকা হয়েছে;
– ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৬.১৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩,৩৭১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ;
– ২০১৮ সালে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (AD Ratio) ৭৯% এ উন্নীত হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৭১%;
– ২০১৮ সালে আমদানির পরিমাণ ২২,০৪১ কোটি টাকা, রপ্তানির পরিমাণ ১১,৪৬৮ কোটি টাকা এবং ফরেন রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ৭,৬০৮ কোটি টাকা;
– ২০১৮ সালে শ্রেণিকৃত ঋণ হতে ৪৮৪ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৩৪ কোটি টাকা নগদ আদায় করা সম্ভব হয়েছে;
– অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা বৃদ্ধি ও মহিলাদের সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা প্রতি মাসের ৩য় সপ্তাহে ‘মহিলা গ্রাহক সেবা সপ্তাহ’ পালন করে আসছি;
– Core Banking Solution (CBS) এর আওতায় ইতোমধ্যে ব্যাংকের সকল শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে; ব্যাংকের ৭১৮টি শাখায় RTGS (Real Time Gross Settlement) চালুর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে;
– ২০১৮ সালে জনতা ব্যাংক কর্তৃক কর্পোরেট আয়কর বাবদ ১৪৮.৮৪ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন উৎসে কর, ভ্যাট ও আবগারী শুল্ক হিসেবে সরকারি কোষাগারে মোট ৮১৪.৩৫ কোটি টাকা জমা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি দৃঢ়ভাবে ২০১৯ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ঘোষণা করে বলেন,ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত এ্যাকশন প্লান-২০১৯ এর কার্যকর বাস্তবায়নসহ ইতিবাচক মানসিকতা ও যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক ২০১৯ সালে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে।