প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরেও ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রয় করা যাচ্ছে না। এর ফলে চলতি বছরের শেষের দিকে ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ১৯ হাজার ৬২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যা এক বছর আগে আট ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লে মূলধন ঘাটতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এটা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি দুটোই বড় ধরনের বাধা।
মূলধন ঘাটতির তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৬টি সরকারি মালিকানা এবং ৩টি বেসরকারি খাতের। ব্যাংক গুলো হল: জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং এসআইবিএল। সরকারি ছয় ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১৭ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা যা এক বছর আগেও ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মুলধন ঘাটতি:
জনতা ব্যাংক: সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা যা গত বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক: মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক: মূলধন ঘাটতি ৬৯০ কোটি টাকা থেকে কমে এসেছে ২৮৬ কোটি টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক: মূলধন ঘাটতি আগে না থাকলেও এবার ৬৬২ কোটি টাকায় পড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক: প্রতিবারের মতো এসব ব্যাংকের মধ্যে মূলধন ঘাটতির শীর্ষে রয়েছে কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৫ কোটি টাকা যা এক বছর আগে ছিল ৭ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক: ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা থেকে কমে ৬৬৯ কোটি টাকা হয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংক:
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৩১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৮ কোটি টাকা। এছাড়া এসআইবিএলের ঘাটতি ৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, কৃষি ব্যাংক , ব্যাংকের খরচের চেয়ে কম সুদে ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। আর এটা সরকারই দিতে বলে। তাই খরচের চেয়ে কম সুদে ঋণ দেয়ার কারণে ব্যাংকটি লাভ করতে পারে না। সরকারের বিধান পালন করতে গিয়েই লোকসানে পড়তে হচ্ছে ব্যাংকটিকে।