অবশেষে ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের স্বপ্নের ট্রেন যাত্রা শুরু হচ্ছে। ৭৮০ জন যাত্রী নিয়ে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের বিরতিহীন ট্রেনটি আগামী ১ ডিসেম্বর রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রথম ট্রেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করলেও বাণিজ্যিকভাবে এ রুটে এখনো ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। ঢাকা থেকে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটে পৌঁছা যাবে। ১০ দিন আগে থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া গেলেও নতুন চালু হতে যাওয়া এ ট্রেনের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে।
কক্সবাজার রুটের জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে প্রথম ট্রেনের জন্য ছয়টি নাম (প্রবাল এক্সপ্রেস, হিমছড়ি এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, ইনানী এক্সপ্রেস, লাবণী এক্সপ্রেস ও সেন্টমার্টিন এক্সপ্রেস) প্রস্তাবনা করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রথম ট্রেনের জন্য কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামটি অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটির নম্বর রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৮১৩ ও কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনের নম্বর ৮১৪ নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা বিলাসবহুল এ ট্রেনে ১৫টি কোচ থাকছে। এর মধ্যে ছয়টি এসি কোচে ৩৩০টি সিট, সাতটি নন-এসি কোচে ৪২০টি সিট ও দুটি খাবার গাড়ির কোচে ৩০টি নন-এসি সিট রয়েছে।
নতুন চালু হতে যাওয়া ট্রেনটির শিডিউল প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজারে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে পৌঁছবে। একইদিন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। ঢাকা থেকে সোমবার বন্ধ থাকবে এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে ট্রেনটি।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজের (মিটার ও ব্রডগেজ) রেললাইন বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত কি না, জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘আমাদের পুরো রেললাইন প্রস্তুত। বিরতিহীনভাবে চালু হতে যাওয়া ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। এ স্টেশনে ট্রেনের ইঞ্জিন ঘোরাতে হবে।’
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে রামু পর্যন্ত নিয়ে আসার পর বিলাসবহুল ট্রেনটি নিয়ে ঢাকায় আসেন সিনিয়র লোকোমাস্টার আবদুল আউয়াল রানা। নতুন রেলপথ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন রেললাইনে সহজেই ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালনা সম্ভব। কিন্তু প্রাথমিকভাবে হয়তো ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার (দোহাজারী থেকে কক্সবাজার), চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাতে হতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন পরিচালনা করা যায়।’ অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু সংস্কার হওয়ায় প্রাথমিকভাবে এ সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য মধ্যবর্তী স্টেশনগুলো প্রস্তুত কি না, জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন যেহেতু বিরতিহীন ট্রেন পরিচালনা করা হবে তাই মধ্যবর্তী স্টেশনগুলো এখনই কাজে লাগছে না। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো উপযোগী হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামে থামলেও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীরা এ ট্রেনে উঠতে পারবেন না। এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী ওঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’ কিন্তু এ ট্রেনের অনুমোদন সম্পর্কে কী দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ তৌফিক ইমাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর ট্রেনটি বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে থামার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে এ দুই স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানো ও নামানোর সুযোগ থাকতে পারে। আর এ বিষয়টি সঠিকভাবে বলতে পারবে রেলওয়ের অপারেশন বিভাগ।’
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলীর বলেন,‘ চট্টগ্রামে যেহেতু ১৫ থেকে ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি থাকবে, তাই চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী ওঠানো ও নামানোর সুযোগও থাকবে।’
এদিকে নতুন এ রুটে পর্যায়ক্রমে আরও সাত জোড়া আন্তঃনগর এবং কমিউটার ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া, ঢাকা থেকে আরও এক জোড়া এবং চাঁদপুর থেকে এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে চলবে একাধিক কমিউটার ট্রেন। এমনকি রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহী থেকেও এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন থাকলেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ছিল না। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায় এ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। পরে ২০১১ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করার পর গত ১১ নভেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। আর এতে কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগের সূচনা হয়।