ঈদের কেনাকাটাকে সামনে রেখে আগের তুলনায় হঠাৎ নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঈদের কেনাকাটা করছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের আগে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে বোনাস দিতে হচ্ছে। মাস শেষ হওয়ার আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন বুঝিয়ে দিচ্ছে। আবার চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এসব কারণে মুদ্রাবাজারে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
এর ফলে অনেক ব্যাংক নগদ টাকার সংকটেও পড়েছে। সংকট মেটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এতে কলমানিতে বুধবার (২৭ এপ্রিল) রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও টাকা ধার বেড়েছে। এ জন্য ঈদের আগে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে আন্তঃব্যাংক ধার বা কলমানির সুদহার বেড়ে গেছে। সার্বিকভাবে মুদ্রাবাজারে টাকার টানাটানি শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ধারের মাধ্যমে নগদ টাকার ঘাটতি মেটানোর সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তব্যাংক মানি মার্কেট প্ল্যাটফর্মগুলো ২৯ ও ৩০ এপ্রিল খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কলমানি বাজারে ব্যাংকগুলোর মধ্যে লেনদেনের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে গতকাল কলমানি বাজারে এক দিনে লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষ দিনে সুদের গড় হার ছিল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ ও সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ দিনে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ মানি মার্কেট ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বামডা) তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের মুদ্রাবাজারে ব্যাংক এশিয়া, আইএফআইসি, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক ধারদাতা ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক ধার করছে। আর এবি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ঢাকা, এনআরবিসি, মেঘনা, সাউথ বাংলা, মিডল্যান্ডসহ নতুন-পুরোনো কয়েকটি ব্যাংক তারল্য চাহিদা মেটাতে বেশি ধার করছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘আমাদের বিপুল সংখ্যার এটিএম বুথগুলোয় প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাখতে হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। আমাদের হাতে থাকা নগদ অর্থ এটিএম বুথে চলে যাওয়ায় ধার করতে হচ্ছে।’
এদিকে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ধার দিচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এএলএস হিসেবে মোট ১৬টি ব্যাংককে ৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। এর মধ্যে রেপোর সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এএলএস ধার দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দেওয়ায় ভালো অবস্থানে থাকা ধারদাতা ব্যাংকগুলো এখন কলমানির পরিবর্তে শর্ট নোটিশে ২ থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সুদহার ৯ শতাংশের বেশিও হতে দেখা গেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, হঠাৎ করে মুদ্রাবাজারে অর্থের টান পড়েছে। প্রয়োজন মেটাতে সোয়াপ, রেপো, শর্ট নোটিশসহ নানা মাধ্যমে ধার করছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সেই হিসেবে আলোচিত সময়ে ব্যাংক খাতে তারল্য কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।