অনাকাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ ঠেকাতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। ইতোমধ্যে ঢাকায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যবস্থা বাতিল করে অনলাইনে বিক্রির কার্যক্রম চালু করেছে। আগামী জুলাই থেকে সারাদেশ ব্যাপী অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি শুরু হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীর ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সব লেনদেন হবে।
এ ছাড়াও নতুন করে আরো কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে যেমন বিনিয়োগকারীর ট্যাক্সফাইল নজরদারির মধ্যে আনতে হবে, এজন্য আয়কর বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে। ট্যাক্সফাইল নজরদারির ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীর আয়কর ফাইলে দেখানো হিসাবের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত হিসারেব পরিসংখ্যান যাচাই করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে যৌথ নামে কোনো কোম্পানি কর্মীর জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তার একক নামে কোনো বিনিয়োগ রয়েছে কিনা-তা খুজে বের করতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও আরজেএসসি কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। সেই সাথে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার ব্যবহারের অনুমতিও পেতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে, ঢাকা অঞ্চলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ঢাকা অঞ্চলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন জমা দেওয়ার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। লেনদেনও হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কিছুটা কমে গেছে। অন্যদিকে অনেকেরই করযোগ্য আয় না থাকা থাকা সত্ত্বেও তাদের ই-টিআইএন নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সঞ্চয়পত্র কিনতে যাওয়া অনেক নারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। শিশির অধিকারী নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, তার স্ত্রীর করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও সঞ্চয়পত্র কিনতে তাকেও ই-টিআইএন নিতে হচ্ছে। এর ফলে বছর বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। ফলে কর অফিসে হয়রানির মুখে পড়তে হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, টিআইএন থাকলেই কর দিতে হবে না। করযোগ্য আয় থাকলেই কেবল কর দিতে হবে। তিনি বলেন, নারী ও স্বল্প আয়ের বিনিয়োগকারীকে আটকানো সরকারের উদ্দেশ্য নয়।
অনেক ব্যক্তি নামে বেনামে ডাকঘর, সঞ্চয় অফিস ও ব্যাংকের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে সঞ্চয়পত্র কিনে আসছিলেন। এতে তারা সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিচ্ছিলেন। ম্যানুয়ালি লেনদেন হওয়ায় তা ধরা যাচ্ছিল না। ফলে নারী ও সীমিত আয়ের মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য দেওয়া বিনিয়োগের সুদ চলে যাচ্ছিল তাদের পকেটে। এটি ঠেকানোর জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।