আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের ( এলপিজি ) দাম আরও এক দফা বাড়ানো হলো। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বেসরকারি খাতে এলপিজির দাম প্রতিকেজি ৮৬ টাকা ৭ পয়সা ধরে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯৯৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৩ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে গতমাসের চেয়ে সিলিন্ডার প্রতি ৪০ টাকা বাড়ল।
একই সঙ্গে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির নতুন দাম প্রতি লিটার ৫০ টাকা ৫৬ পয়সা। আগে এটি ছিল ৪৮ টাকা ৭১ পয়সা। অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটার এক টাকা ৮৫ পয়সা বাড়ল যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন : এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ
আগস্ট মাসে বেসরকারি পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে জুলাই মাসে ছিল ৮৯১ টাকা এবং জুন মাসে ছিল ৮৪২ টাকা। এদিকে প্রতি লিটার অটোগ্যাস আগস্টে ছিল ৪৮ টাকা ৭১ পয়সা, জুলাইয়ে ছিল ৪৪ টাকা।
সে হিসেবে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা ও অটোগ্যাসের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ২.৩৯ টাকা।
আজ সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দামের এই আদেশ দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এসময় বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল-ই এলাহী, বজলুর রহমান, কামরুজ্জামান, সচিব রুবিনা ফেরদৌসীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এর বাইরে ৫.৫, ১২.৫, ১৫, ১৬, ১৮, ২০, ২৫, ৩০, ৩৩, ৩৫ ও ৪৫ কেজি এলপিজির দামও বিইআরসি আদেশে পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে।
তবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম আগের মতোই ৫৯১ টাকা থাকবে। যেহেতু এই দামের সঙ্গে সৌদি সিপির কোনো সম্পর্ক নেই, যা কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
এদিকে আবাসিক এ শিল্পে কেন্দ্রীয়ভাবে এলপিজির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে একসঙ্গে বাসা বা কারখানার নিচে বা পাশে বড় সিলিন্ডার থেকে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সিলিন্ডার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসায় বাসায় বা কারখানায় সরবরাহ করা হচ্ছে গ্যাস। এটির দামও কমিশন পুনর্র্নিধারণ করে।
রেটিকুলেটেড সিস্টেমে সরবরাহ করা এলপিজির দাম ভোক্তা পর্যায়ে মূসক ছাড়া প্রতিকেজি ৭৮ টাকা ৩১ পয়সা এবং মূসকসহ ৮৩ টাকা ৭৭ পয়সা অথবা লিটার হিসাবে প্রতি লিটার মূসক ছাড়া ০ দশমিক ১৭৪০ টাকা এবং মূসকসহ প্রতি লিটার ০ দশমিক ১৮৬১ টাকা পুনর্র্নিধারণ করেছে কমিশন।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জানান, বিইআরসি আইনের অনুচ্ছেদ ক অনুযায়ী আগস্ট মাসে সৌদি আরামকো কর্তৃক প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপির দাম যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৬৬০ ডলার এবং ৬৫৫ ডলার হয়েছে। এ অনুযায়ী আগস্ট মাসে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত ৩৫:৬৫ বিবেচনায় প্রোপেন ও বিউটেনের গড় সৌদি সিপি প্রতি মেট্রিক টন ৬৫৬.৭৫ ডলার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগের মাসে প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৬২০ ডলার এবং ৬২০ ডলার অনুযায়ী প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত ৩৫:৬৫ বিবেচনায় প্রোপেন ও বিউটেনের গড় সৌদি সিপি প্রতি মেট্রিক টন ৬২০ ডলার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেয় কমিশন। সাধারণত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) অনুযায়ী দেশে এলপিজির দাম নির্ধারিত হয়। প্রতি মাসের শেষে যখন সৌদি সিপির দাম পরিবর্তন হয়, তখন এলপিজির দাম পরিবর্তনের বিষয়ে নতুন করে আদেশ দেয় কমিশন।
বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, দাম পুনর্নির্ধারণ করা হলেও গত ১২ এপ্রিল এলপিজির সংক্রান্ত অন্যান্য যেসব আদেশ কমিশন দিয়েছিল তা অপরিবর্তিত থাকবে।
এর আগে গত অগাস্ট মাসে প্রতিকেজি এলপিজির দাম ৮ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল। জুলাই মাসে প্রতিকেজি এলপিজির খুচরা মূল্য ৭০ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৭৪ টাকা ২৪ পয়সা।