রাজধানীতে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার। আইসিইউ বেড আছে মাত্র ১২৮টি। এসব দিয়ে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ২০টি। আইসিইউ সেবা পাওয়ার আশায় বড় হাসপাতাল ভেবে অনেকেই এখানে ছুটে আসেন; কিন্তু খালি পাওয়া যায় না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, করোনা রোগীদের এখন বিশাল চাপ। কোনো বেড ফাঁকা নেই। জেনারেল যারা মেডিসিনের কেইস নিয়ে আসছেন, তাদের নিতে পারছি না আমরা। আমাদের কোভিড সার্জারি ও গাইনির কিছু বেড ফাঁকা আছে। কোভিড মেডিসিনের কোনো বেড খালি নেই। ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী নিয়ে আছি।
তিনি আরও বলেন, বয়স্করা হয়ত বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় তারাও ক্রিটিক্যাল রোগী হিসেবে আসছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা যদি লাগাম টেনে ধরতে না পারি, এটা কিন্তু দুই-তিন সপ্তাহ পরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষের দুর্দশাও বাড়বে। একটা কঠিন সময় আসছে আমাদের জন্য।
কোভিডে সবার অক্সিজেন লাইন লাগে। যে কয়টা অক্সিজেন লাইন আছে, সবগুলোতেই আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। কোনোটাই কিন্তু খালি নেই।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরি কোভিড হাসপাতাল করা হয়। ৩১০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে মাস দেড়েক আগেও সিট খালি পাওয়া যেত। এক মাস ধরেই বাড়ছিল রোগীর চাপ। এখন এ হাসপাতালে সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। সুস্থ হয়ে কোনো একজন হাসপাতাল ছাড়েন কিনা এ অপেক্ষায় থাকেন নতুন রোগীর স্বজনরা। গত ১০ দিনে এ হাসপাতালের ১৯টি আইসিইউ বেডের একটিও ফাঁকা হয়নি।
মুগদা হাসপাতালের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এটা পরিস্কার। আমরা ১৪টি আইসিইউ চালু রেখেছি আড় ৫টি যোগ করে এখন ১৯ টি আছে। এর পরও কমতি আছে। এর মধ্যেই আমরা প্রস্তুত আছি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য।
শুধু মুগদা হাসপাতাল কিংবা ঢাকা মেডিক্যাল নয়, রাজধানীর অন্য সরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্রও একই রকম।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান সে কথা বলেন, ‘রোগীর খুবই চাপ, আমরা ঠাঁই দিতে পারছি না এমন একটা অবস্থা। বেডগুলো আজকে মোটামুটি পূর্ণ। দুই-একদিনের মধ্যে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালু হবে আমাদের এখানে। এখন সাধারণ বেড আছে ১৫০টা। আরও ৫০টা বেড আমরা চালু করব।’
নতুন রোগীদের অধিকাংশেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অক্সিজেনের রোগী ছাড়া আমরা ভর্তি নিচ্ছি না।’
রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। এসব হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ২ হাজার ৫৫৫টি। আর ১০টির মধ্যে আইসিইউ বেড রয়েছে আটটিতে যার মোট সংখ্যা ১২৮টি। যেগুলোর কোনেটিই খালি নেই।