খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ পুনর্গঠন ও অবোলপনের বিশেষ সুবিধাসহ সরকার নানান সুযোগ সুবিধা দিয়েও লাগাম টানতে পারছে না খেলাপি ঋণের। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালের রেকর্ড।
ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতি প্রভাব খাটিয়ে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করা, বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিল করতে অনেকে ঋণ পরিশোধ না করায় সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।
বর্তমানে খেলাপি ঋণ কমাতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধার দেয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ঋণ খেলাপি শিল্প গ্রুপ পাচ্ছে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ। এছাড়া কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ অবলোপনের বিভিন্ন শর্ত শিথিল করার পরও বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
এদিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরই খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না বলে হুঁশিয়ারির দেওয়ার পরও গত ৯ মাসে খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে আদায় বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। যারা আদায় করতে পারবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে প্রয়োজনে তাদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, নানা কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংক খাতের অবস্থা খুব খারাপ। ঋণ খেলাপি এখন বড় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপিদের দৃশ্যমান শাস্তি আর সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋধ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর একই সময়ে (সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে) খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত তিন মাসে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকে সামান্য কমেছে।
সেপ্টেম্বর ২০১৯ শেষে সরকারি মালিকানাধীন (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) ব্যাংকগুলোর খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, যা জুন শেষে ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি টাকা। জুন শেষে ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।