খোলাবাজারে ডলারের তেজ বেশ খানিকটা কমেছে; বেশ কিছুদিন পর ১১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। সোমবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ১০৯ টাকা ৮০ পয়সা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা; রোববার নিয়েছিলেন ১১১ টাকা ৫০ পয়সা। তার আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে এই বাজারে প্রতি ডলার ১১৪ টাকা থেকে ১১৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়েছে।
এদিকে রোববার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করেছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায়। এতে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দরের ব্যবধান দেড়-দুই টাকার মধ্যে চলে এসেছে; অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে যেটাকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।
বাজারে ডলার সংকট কাটাতে কোনো পদক্ষেপেই যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা গত ১১ সেপ্টেম্বর এক সভায় ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেন। তাতে রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা, প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। যেটাকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়।
সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংক ১০৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছে ১০৮ টাকা। বেসরকারি ইস্টার্ন ও সিটি ব্যাংক ১০৬ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে।
খোলাবাজারে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা ডলারের দর বাড়তে বাড়তে গত ১০ আগস্ট ১২০ টাকায় পৌঁছায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযানের মুখে নিম্নমুখী হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। তারপরও ১১০ টাকার ওপরে অবস্থান করছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোলাবাজারের এক ডলার ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। মানুষ এখন ভালো বিক্রি করতে আসে। সে কারণেই দাম কমেছে।’
গত বছরের আগস্ট থেকে দেশে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। দেখা দিতে থাকে ডলারের সংকট; বাড়তে থাকে দর। শক্তিশালী হতে থাকে ডলার, দুর্বল হতে থাকে টাকা। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোর দামকে স্বীকৃতি দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই দরকেই আন্তব্যাংক লেনদেন দর বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। আগের দিনের লেনদেনের দরকে পরের দিন সকালে প্রকাশ করা হয়। এটাকেই বাজারভিত্তিক দর বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।