নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাইরয়েডের সমস্যা হতে পারে। যদিও গবেষণা বলছে, পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে থাইরয়েডের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এই রোগের চিকিৎসা করা না হলে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি অস্ত্রোপচারও করার প্রয়োজন হতে পারে।
যদিও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে এ বিষয়ে অনেকেই সচেতন নন, আবার অনেকে এই ব্যাধিকে স্বাভাবিকভাবে নেন। যা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
থাইরয়েড কি?
থাইরয়েড হলো ঘাড়ের একটি প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যা টি-থ্রি ও টি-ফোর নামক হরমোন তৈরি করে। ভারতের পুনের রুবি হল ক্লিনিকের পরামর্শক এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট ডা. হর্ষাল একাতপুরে এ বিষয়ে জানান, টিএসএইচ (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত একটি হরমোন।
যা থাইরয়েড গ্রন্থির নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে, টিএসএইচ থাইরয়েড ডিসঅর্ডারগুলো সাধারণ রক্ত পরীক্ষা করেই থাইরয়েডের কর্মহীনতা নির্ণয় করা যায়।
ডা. একাতপুরের মতে, ‘বয়স্কদের মধ্যে থাইরয়েডের কর্মহীনতা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তবে বছরের পর বছর ধরে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগলেও তা নির্ণয় করা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। কারণ প্রথম কয়েক বছরে এর কোনো গুরুতর লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
থাইরয়েড কত প্রকার ও কী কী?
থাইরয়েড গ্রন্থির অত্যধিক কার্যকারিতা সাধারণত প্রাথমিক হাইপোথাইরয়েডিজম হিসেবে পরিচিত। বয়স্কদের মধ্যে এটি অ্যাটিপিকাল লক্ষণ বা একটি একক উপসর্গের সঙ্গে উপস্থিত হতে পারে।
যেমন- নড়াচড়ায় অলসতা, অত্যধিক তন্দ্রা, মুখের ফোলাভাব, মেজাজ খিটখিটে, শক্তি ও ক্ষুধা কমে যাওয়া, লিবিডো হ্রাস বা যৌন কর্মহীনতা। অনেকে এই লক্ষণগুলোকে সাধারণত বার্ধক্য, ভিটামিনের ঘাটতি ও অন্যান্য কিছু স্নায়বিক রোগের জন্য দায়ী বলে ভেবে নেন।
তবে স্বাস্থ্য সচেতনদের উচিত এসব লক্ষণ দেখলে টি-ফোর ও টিএসএইচ টেস্ট করা। রক্তের মাধ্যমেই এই পরীক্ষা করা হয়। যদি সঠিকভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয় ও চিকিত্সা করা হয় তাহলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন নির্দিষ্ট চিকিৎসা ও জীবনযাত্রা উন্নত করার মাধ্যমে।
এই বিশেষজ্ঞ জানান, যদি থাইরডের সমস্যা নির্ণয় ও চিকিত্সা করা না হয় তাহলে জীবনমানের অবনতি ঘটতে পারে। এমনকি হৃদরোগেরও ঝুঁকি বাড়তে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড গ্রন্থি বা রক্তে থাইরয়েড হরমোনের উচ্চতর মাত্রা (টি-থ্রি ও টি-ফোর) থাইরোটক্সিকোসিস নামে পরিচিত। ডা. একাতপুর এ বিষয়ে বলেন, ‘এটি বয়স্কদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্ন উপসর্গের সঙ্গে দেখা দিতে পারে।’
‘যেমন- ওজন কমে যাওয়া, হাত কাঁপা, উচ্চ হৃদস্পন্দন ও ধড়ফড়, অতিরিক্ত ঘাম, উদ্বেগ, প্রায়শই ঘাবড়ে যাওয়া ও অনিদ্রা অনুভব করতে পারেন। এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত থাইরয়েড পরীক্ষা করানো উচিত।’