দুই বধূর দাবী স্বামী তার। নতুন বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যেতে প্রস্তুত বর। এরমাঝে মাইক্রোবাসে স্বজনদের নিয়ে উপস্থিত আরেক বধূ। শুরু হয় টানাটানি; অনেকটা রম্য নাটকের দৃশ্যের মতো। এর জেরে হাতাহাতিতে দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। ঘটনা গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। এর ফাঁকে অ্যাকশন চরিত্র নিয়ে উপস্থিত উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক বউ আর স্বামীকে নিয়ে চম্পট নেতাকর্মীরা। যদিও স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
দুই বধূর টানাটানিতে পড়া বর ছানোয়ার হোসেন জনতা ব্যাংকের ভূরুঙ্গামারী শাখার ক্যাশ কর্মকর্তা। তিনি ভরতের ছড়া গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে। এমন অলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভরতের ছড়া গ্রামে। আর এ ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে।
পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, ব্যাংকের ক্যাশ কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে বিয়ে করেন ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের আব্বাস আলীর মেয়ে আশানুল আঁখিকে। স্থানীয় রীতি অনুযায়ী শুক্রবার বিকেলে নববধু আঁখিকে নিয়ে ভূরুঙ্গামারী শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হন। ঠিক সে মূহুর্তে আইরিন আইমিন নামের এক নারী স্বজনদের নিয়ে মাইক্রোবাসে চলে আসেন ছানোয়ারের বাড়ি। নিজেকে ছানোয়ারের স্ত্রী দাবী করে বাড়িতে ঢুকে পড়েন। একই উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় এলাকার আয়নাল হকের মেয়ে আইরিন দাবি করেন দীর্ঘদিন প্রেমের পর গত জুলাই মাসে ছানোয়ার তাকে বিয়ে করেন। ৩০ জুলাই শুক্রবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িতে নেয়ার কথা থাকলেও গোপনে বিয়ে করার খবর জানতে পেয়ে ছানোয়ার বাড়িতে চলে এসেছেন।
দুই বধূর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর ছানোয়ার, নববধূ আঁখির পরিবার ও আইরিনের সাথে আসা বাবাসহ স্বজনের সাথে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ছানোয়ারকে নিয়ে দুই বধুর টানাটানি শুরু হয়। আঁখির স্বজন চায় ছানোয়ারকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যেতে। তাকে মাইক্রোবাস থেকে টেনে নামায় আইরিনের লোকজন। ঘটনার এক পর্যায় তিন পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত স্থানীয়রা সবপক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে ঘটনাটির সুরাহার জন্য স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এরমাঝে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকারের নেতৃত্বে অন্তত ১০জনের নেতাকর্মীর একটি দল মাইক্রোবাসে ঘটনাস্থলে উপস্থিত। মূহুর্তে তারা বর ছানোয়ার ও আঁখিকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে জানা যায়, নববধূ আঁখির পরিবারের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে এসেছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে ছানোয়ার কোন কথাই বলতে চাননি। তিনি বলেন, পরে সামনা সামনি বসে কথা বলতে হবে।
নববধু আশানুল আঁখী বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ছানোয়ারের সাথে তার বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় অনানুষ্ঠানিকভাবে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। নিজেকে ছানোয়ারের প্রথম স্ত্রী দাবি করে আঁখি বলেন ওই মেয়ে (আইরিন) ছানোয়ারকে বাড়িতে চায়ের দাওয়াত দিয়ে জোর করে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছে। এতে তার (ছানোয়ারের) মত ছিল না। নববধূর কথায় জানা যায় যেভাবে হোক আইরিনের সাথে বিয়ের রেজিস্ট্রির বিষয়টি জেনেও তার পরিবার বিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে আন্ধারীঝাড় থেকে আসা আইরিন আইমিনের দাবী ছানোয়ারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ২৩ জুলাই নাগেশ্বরীতে মামার বাসায় ছানোয়ারের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর দু’জনে ওই বাড়িতে থাকার পর শুক্রবার (৩০ জুলাই) পারিবারিকভাবে বাড়িতে আনার কথা বলে আসেন ছানোয়ার। শুক্রবার তাদের বাড়িতে আয়োজন করা হয়। আত্মীয়রা চলে আসে। বরযাত্রী আসতে দেরী হলে ছানোয়ারের ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন কলটি রিসিভ করেননি। এরমাঝে জানতে পারেন ছানোয়ার বিয়ে করেছেন ভূরুঙ্গামারীতে। নববধূকে নিয়ে নতুন শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছেন। চলে আসেন তার বাড়ি।
আইরিন আইমিন বলেন, ‘আমার সাথে প্রেম ছিল। বিয়েও করেছে। আমি ছানোয়ারের বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী। এজন্য তার বাড়িতে অবস্থান করছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ভূরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মাস্টার জানান, একজন সচেতন ব্যক্তি দু’টি মেয়েকে বিয়ে করার ঘটনাটি খুবই খারাপ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকে বসার কথা ছিল। তারমাঝে ছাত্রলীগের ছেলেরা পক্ষ নিয়ে বর ও নতুন বউকে নিয়ে গেছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার জানান, ‘আমরা কয়েকজন গিয়ে ছানোয়ার ও আঁখিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেখানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জানামতে ছানোয়ারের সাথে আঁখির বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে প্রায় বছরখানেক আগে।’
এ ঘটনায় ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, স্ত্রীর দাবী করা দুই মেয়েই ব্যাংক কর্মকর্তা ছানোয়ারের স্ত্রী। একজনকে চলতি বছরের মার্চ মাসে ও অপরজনকে জুলাই মাসে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে কোনো পক্ষ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি। ঘটনাস্থলে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করছে বলে শোনা যাচ্ছে।