নতুন পরিকল্পনায় ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পুরোনো আইসিডি থেকে গেণ্ডারিয়া, জুরাইন, পাগলা এলাকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা হয়ে মাওয়া পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ তো চলছেই বলেন পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের দিনেই সড়ক-যানের সঙ্গে ট্রেনও চলবে-এমন আশা নিয়েই ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মাওয়া-ভাঙ্গা ৩৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়। যদিও পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পে নির্মাণ হবে ঢাকা-পদ্মা সেতু-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ।
কিন্তু মাওয়া-ভাঙ্গা পথটুকু সম্পন্ন করেও যেন শুরুর দিনেই ট্রেন চালানো যায়, সেটাই ছিল রেলপথ বিভাগের স্বপ্ন। তবে সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। পদ্মা সেতুতে ট্রেনে চড়ার জন্য সেতু উদ্বোধনের পর আরও বছরখানেক অপেক্ষা করতে হতে পারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে।
এ আশাভঙ্গের কারণ-পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছরের জুনের আগে তারা সেতুতে রেলকে কাজ করতে দেবে না। আর রেল বলছে, কাজের জন্য সেতু পাওয়ার পর লাইন বসাতে সাত থেকে আট মাস সময় লাগবে। এদিকে সরকার চাইছে জুনেই পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দিতে।
যেহেতু স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না, সেহেতু পরিকল্পনায়ও বদল এনেছে রেলওয়ে। সেতু উদ্বোধনের বছরখানেক পর যেন ঢাকা থেকেই ট্রেনে চেপে পদ্মা সেতু হয়ে অন্তত ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেন চলতে পারে, তাই নতুন পরিকল্পনায় ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার বিকালে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কিলোমিটার রেলপথ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করছিলাম। একটাই কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সেতু উদ্বোধনের দিন সড়ক-যানের সঙ্গে ট্রেনও চালানো। বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেমেছিলাম। কিন্তু সময়মতো সেতুতে কাজ করার অনুমতি পাইনি। ফলে সেই চ্যালেঞ্জ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা পুরোপুরি আশা ছাড়িনি। অবশ্য নতুন পরিকল্পনায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করছি। ঢাকা-ভাঙ্গা লাইন হলে যাত্রী হবে, ট্রেনও চালানো সহজ হবে।’
তিন ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প। মাওয়া-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা, ঢাকা-মাওয়া ও ভাঙ্গা-যশোর। এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকা ঢাকা থেকে মাওয়া অংশ বাস্তবায়নে দেওয়া হচ্ছে বেশি গুরুত্ব।
অন্যদিকে মাওয়া-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা অংশে পদ্মা সেতুতে দ্রুত রেললাইন বসানোর জন্য যন্ত্রপাতি, জনবল ও কাজের সময় বাড়ানোর কথা বলে অতিরিক্ত প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরসি, দিয়েছে নানা শর্ত। তবে রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমরা সে প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। বরং ঢাকা-মাওয়া রেলপথেই এখন নজর রাখছি।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম ভাগ মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৭১ শতাংশ কাজ হয়েছে। রেলওয়ে অপারেশন ও ট্রাফিক বিভাগ বলছে, একই দিন সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো হলেও অপারেশন ব্যাহত হতো। বরং পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ হলে ট্রেন পরিচালনা সহজ ও কার্যকর হবে। প্রচুর যাত্রী পাওয়া যাবে।
মাওয়া থেকে ঢাকার দিকে লাইন স্থাপন বেশ এগিয়ে আছে। পুরান ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথে ১৮ কিলোমিটার উড়াল লাইন হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উড়াল লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর ওপর প্রায় ৩ কিলোমিটার উড়াল ভায়াডাক্ট স্থাপনের পাইল বসানোও হচ্ছে। ঢাকা থেকে বুড়িগঙ্গার পার পর্যন্ত লাইন স্থাপনে ইতোমধ্যে নির্ধারিত এলাকায় প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল এফএম জাহিদ হোসেন বলেন, মূল সেতুতে রেলপথ স্থাপনের স্থান ঘেঁষে গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনসহ কারিগরি নানা কাজ চলছে। এ কারণে এখনই রেলপথ বসানোর অনুমতি মিলছে না। তবে সেতুর দুপাশে রেললাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত চলছে।
রেলপথ সচিব সেলিম রেজা বলেন, আমরা নতুন প্রকল্প অনুযায়ী ঢাকা থেকে মাওয়া লাইন স্থাপনের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু করেছি। একই দিন সড়ক যানের সঙ্গে ট্রেন না চালানো গেলেও যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ কাজ সমাপ্ত হবে। তখন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন যাবে ভাঙ্গা পর্যন্ত।