পরিচালকদের নিজ নামে ঋণের পরিমাণ পৌনে লাখ কোটি টাকার বেশি। পরিচালকরা যাতে বেনামে কোন ঋণ নিতে না পারেন সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেনামী ঋণের পরিমাণও বিপুল।
পরিচালকরা বেনামে কোন ঋণ নিতে না পারেন এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, এখন থেকে ঋণগ্রহীতা কোম্পানির পরিচালকদের তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ভান্ডার বা ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) হালনাগাদ করে রাখতে হবে। একই সঙ্গে পরিচালকদের দায় দায়িত্বও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সাবেক পরিচালকদের নামে ঋণের বিপরীতে কর্পোরেট, ব্যক্তিগত বা দুই ধরনের গ্যারান্টি থাকলে তার কার্যকারিতা সম্পর্কেও সিআইবিকে জানাতে হবে।
এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোন ঋণ গ্রহীতা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে সর্বনিম্ম ১ টাকা থকে সর্বোচ্চ যে কোন অংকের ঋণের তথ্য রয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের বিপরীতে বন্ধকী জামানত এবং যে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে সেই কোম্পানির পরিচালকদের তথ্যও রয়েছে। এছাড়া ঋণের বিপরীতে পরিচালকদের নামে ব্যক্তিগত, কর্পোরেট বা দুই ধরনের গ্যারান্টি থাকলেও সেসব তথ্যও সিআইবিতে রয়েছে।
ঋণ নেওয়ার সময় এসব তথ্য সিআইবিতে দিতে হয়। কিন্তু ঋণ দেওয়ার পর বিভিন্ন সময় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসে। আগের পরিচালক বাদ পড়েন বা নতুন পরিচালক যুক্ত হন। এসব তথ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিআইবিতে আর যুক্ত করে না। এ কারণে কোন ঋণ খেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিচালকরাও খেলাপি হন। ফলে খেলাপিরা নতুন ঋণ নিতে পারেন না। কিন্তু কোম্পানির পর্ষদ থেকে অনেক পরিচালকদের চলে যাওয়া বা নতুন পরিচালকদের নাম সিআইবিতে হালনাগাদ না হওয়ার কারণে অনেক ঋণ খেলাপি যেমন নতুন ঋণ পেয়ে যাচ্ছেন। তেমনি অনেকে ঋণ খেলাপি হয়েও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে বসে যাচ্ছেন। এছাড়া আগের পচিালকের স্বত্ব গোপন করে নতুন করে বেনামী ঋণ নিচ্ছেন। এসব ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ঋণগ্রহীতা কোম্পানির পরিচালকদের পর্ষদে কোন পরিবর্তন আসলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে জানাতে হবে। কোন পরিচালক পর্ষদ থেকে সরে গেলে বা নতুন পরিচালক যুক্ত হলে তা জানাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ও সিলসহ নামের তালিকা সিআইবিতে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের দায়দায়িত্ব, শেয়ারের মালিকানা, ঋণের বিপরীতে ব্যক্তিগত, কর্পোরেট এবং এই দুই ধরনের গ্যারান্টি থাকলেও জানাতে হবে। পরিচালক পদ থেকে সরে গেলে ওইসব গ্যারান্টি বহাল থাকবে কিনা তা পর্ষদের রেজুলেশনসহ জানাতে হবে।
সূত্র জানায়, ঋণ নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট গ্যারান্টি দিতে হয়। কোন ঋণ খেলাপি হলে ওই গ্যারান্টির কারণে সংশ্লিষ্ট পরিচালকও খেলাপি হয়ে পড়েন। ফলে তিনি আর নতুন করে কোন ঋণের বিপরীতে গ্যারিান্টি দিতে পারেন না। বর্তমানে খ্যতিমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেবলমাত্র পরিচালকদের ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট গ্যারান্টিতেও বিভিন্ন ধরনের ঋণ দেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সিআইবি ডাটাবেইজ সংশোধনের লক্ষ্যে সিআইবিতে প্রতিবেদনে পাঠানোর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে হালনাগাদ প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।
বর্তমান, সাবেকসহ সব ধরনের পরিচালকদের নামের তালিকা, তাদের দায়দায়িত্ব এবং ঋণের বিপরীতে ব্যক্তিগত বা কর্পোরেট গ্যারান্টি থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে বের করা সম্ভব। এতে ঋণ খেলাপিদের বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ করা যাবে। ঠেকানো যাবে বেনামী ঋণ।