বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৪৮ বছরে পা রাখলো। এবছর সেম্পেম্বর মাসে এ বহরে যোগ হবে বোয়িংয়ের তৈরি নতুন দুটি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এছাড়া শুধুই মালামাল পরিবহনের জন্য ফ্রেইটার সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে এই এয়ারলাইনস।
১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিমান বহরে রয়েছে ১৩টি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে দুটি হলো বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার (আকাশবীণা ও হংসবলাকা)। আরও দুটি ড্রিমলাইনার আগামী সেপ্টেম্বরে যোগ হবে বহরে।
গত ৫ ডিসেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে যুক্ত হওয়া বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘হংসবলাকা’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মালামাল পরিবহনে বিমানের কার্গো সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিতে বলেন তিনি। তার নির্দেশে বিমানের ফ্রেইটার চালুর বিষয়ে ফিজিবল স্টাডির জন্য ১২ ডিসেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিমান। বিমানের রেভিনিউ বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে এর প্রধান করা হয়।
তারা জানিয়েছে পরিবহন ও ভবিষ্যতে কার্গো পরিবহনের চাহিদা নিরূপণ করবে কমিটি। বিমানের কার্গো সার্ভিসের বাজার, রুট নির্ধারণসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবেন এর সদস্যরা। এছাড়া ফ্রেইটার সার্ভিস চালু করতে কী ধরনের উড়োজাহাজ প্রয়োজন ও এর দাম কত, এমন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে। কমিটির দেওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ফ্রেইটার সার্ভিস চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
নিজস্ব আকাশযানের পাশপাশি লিজেও উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান। ২০১৯ সালে দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ লিজ নেবে এই সংস্থা। ২০০৮ সালে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রয় চুক্তির অধীনে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিমান। এর মধ্যে ৮টি ইতোমধ্যে বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে।
জানা গেছে— বহরের ১৩টি উড়োজাহাজ দিয়ে বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও ৭টি অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এসব ফ্লাইটে যাত্রী আর তাদের ব্যাগেজ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে মালামাল বহন করে বিমান। ফ্রেইটার উড়োজাহাজ থাকলে এসব গন্তব্যের বাইরেও শুধু মালামাল বহন করতে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে বাংলাদেশে আকাশপথে আমদানি ও রফতানিকৃত ১০ শতাংশ মালামাল বহন করে বিমান। ৯০ শতাংশ মালামাল পরিবহন করে থাকে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। যদিও মালামাল পরিবহন বিমানের আয়ের বৃহৎ একটি উৎস। ২০১৫-১৬ সালে কার্গো থেকে বিমান আয় করে ৩১৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অবশ্য তা কমে আসে ২৪৪ কোটি টাকায়।
এ প্রসঙ্গে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘বিমান বহরের প্রতিটি উড়োজাহাজে যাত্রী বহন করা হয়। এসব উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের পর খালি জায়গায় কার্গো মালামাল পরিবহন করা হয়। ফলে যাত্রী চাপ বাড়লে কার্গো মালামাল বহনে সমস্যা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আকাশপথে পণ্য পরিবহনের চাহিদা বেড়েছে। এই খাত থেকে আয় করতে হলে বিমানের পৃথক কার্গো উড়োজাহাজ প্রয়োজন। ফ্রেইটার সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ফ্রেইটার সার্ভিস চালু ছাড়াও বেশ কয়েকটি নতুন রুট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে বিমানের। নতুন বছরের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘এ বছরে বিমান বহরে দুটি নতুন বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ যুক্ত হবে। পাশাপাশি নতুন গন্তব্যে বিমান তার ডানা প্রসারিত করবে। কলম্বো, মালে ও গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জানান, গত ৪৭ বছরে বিমান ৫ কোটি ৪৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। হজযাত্রী ছাড়াও দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে মৃত প্রবাসীদের লাশ বিনা খরচে বহন করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।